সরু কোমর তৈরীর সূত্র
|
২৪ শ্রাবণ ১৪২৩ |
Monday, August 8, 2016
মডেল কারিশমার মতো মেদহীন কোমরের জন্য ডােয়ট ও ব্যায়াম করতে হবে। ‘জিরো ফিগার’ এই শব্দজোড়া ফ্যাশন দুনিয়ায় খুব চলতি। মেদ ঝরিয়ে কোমর সরু করে ফেলা জিরো ফিগারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কোমর চক্রবৃদ্ধি হারে মোটা হতে থাকলে সৌন্দর্য যেমন খর্ব হয়, তেমনি এটি রোগ-ব্যাধিরও কারণ। নাভি বরাবর শরীরের চারদিকে কাল্পনিক রেখাকে বলা হয় ওয়েস্ট লাইন। এই ওয়েস্ট লাইন শরীরের গঠনভেদে ছেলেদের জন্য এবং মেয়েদের জন্য আলাদা। ওয়েস্ট লাইন নির্দিষ্ট মাপের নিচে থাকলে আপনি রোগের শঙ্কা এড়াতে পারেন ঠিকই। কিন্তু সৌন্দর্য বর্ধনে কোমর কমাতে হবে আরও।
কোমর
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘কোমরের মেদ বাড়ার সঙ্গে অন্যান্য রোগও সম্পর্কযুক্ত। অতিরিক্ত ওজন যাঁদের, তাঁদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকে। উচ্চরক্তচাপ ও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা তাঁদের বেশি। তাঁরা ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতেও থাকেন। হাড়ের রোগ যেমন অস্টিওপোরেসিসও তাঁদের বেশি। তাই শরীর ও কোমরে মেদ থাকলে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ও ব্যায়াম করে দ্রুত কমিয়ে ফেলা উচিত।’
যাঁরা ভোজনরসিক, তাঁদের সতর্ক হতে হবে এখনই। খাওয়াদাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ এনে ঝরিয়ে ফেলতে হবে বাড়তি মেদ। শারীরিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি এতে সুস্থতাও নিশ্চিত হবে। বারডেম জেনারেল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ পুষ্টিবিদ শামছুন্নাহার নাহিদ জানালেন, ‘যাঁরা ভাত বেশি খেতে পছন্দ করেন, তাঁদের কোমর মোটা হয়ে যাওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। যাঁরা খেয়েই একটু ভাতঘুম দিয়ে নেন, কিংবা খাওয়াদাওয়ার পরে আলসেমিতে শুয়ে-বসে থাকেন, তাঁদের কোমরও দ্রুত মোটা হয়ে যায়। খাওয়াদাওয়া আর ব্যায়ামের সমন্বয়ে এই অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা এড়ানো যায়।’
শুধু ভাত নয়, শর্করা আছে এমন খাদ্য যেমন, আলু, মিষ্টি কুমড়া, কচু এসব খাবারে বিধিনিষেধ মানতে হবে। আর কোমরের মেদ কমাতে খেতে পারেন প্রচুর আঁশযুক্ত শাকসবজি এবং ফল। আঁশযুক্ত খাবার শরীরে মেদ জমতে বাধা দেয়। যাঁরা ভাত কম খাচ্ছেন, সেই সঙ্গে আঁশযুক্ত খাবার ভিটামিন মিনারেলও কম খাচ্ছেন, তাঁদেরও কোমর মোটা হয়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। তাই শর্করা কম খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আঁশযুক্ত খাবার, ভিটামিন, মিনারেলের পরিমাণও বাড়াতে হবে।
শুধু খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনলে, কাঙ্ক্ষিত কোমর পাওয়া সম্ভব না। এ জন্য ঘামও ঝরাতে হবে। কোমর কমাতে ব্যায়াম করতে হবে নিয়মিত। যদি কোনো তাড়াহুড়ো না থাকে, করতে পারেন দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, দড়ি লাফানোর মতো ব্যায়ামগুলো। এটি শরীর ও কোমরের মেদ ঝরাবে। আরেকটু দ্রুত মেদ ঝরাতে সাঁতারে অভ্যস্ত হতে পারেন। পাহাড়ি এলাকায় হিল ওয়াকিং করেও মেদ ঝরানো যায়। ফার্মগেটের ম্যাক্সিমাম ফিটনেস জিমের প্রধান প্রশিক্ষক মাহাবুবুর রহমান জানালেন, নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম নিয়ম মেনে করলে দ্রুত কোমর কমানো সম্ভব। প্রথমেই করতে পারেন, ক্রাঞ্চ। এই ব্যায়ামটি করতে প্রথমেই হাঁটু ভাঁজ করে মেঝেতে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার দুই হাত মাথার দুই পাশে আস্তে করে স্পর্শ করুন। এবার শরীরের ওপরের অংশ আস্তে আস্তে ওপরে ওঠান। এভাবে ২০ থেকে ৩০ বার করে তিন সেটে করুন। তারপর করুন লেগ রেইস ব্যায়ামটি। এ ক্ষেত্রে মাটিতে শুয়ে হাত দেহের দুই পাশে রাখুন, এবার পা জোড়া করে রেখে আস্তে আস্তে দুটো পাই মাটি থেকে ৯০ ডিগ্রি কোণে ওপরে তুলুন। এটি ২০ থেকে ২৫ বার করে তিন সেটে করুন।
এবার করুন অবলিগ ক্রাঞ্চ। এই ব্যায়ামটি করতে মাটিতে শুয়েই দুই পা এক পাশে কাত করে রাখুন। এবার দুই হাত মাথার দুই পাশে স্পর্শ করে শরীরের ওপরের অংশ ওঠানোর চেষ্টা করুন। ১৫ থেকে ২০ বার, এভাবে তিন সেট দিন। এবার করুন পদাঙ্ক। এই ব্যায়ামের জন্য উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার কনুইয়ে ভর দিয়ে শরীর জাগিয়ে সোজা অবস্থায় শূন্যে ধরে রাখুন, আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী।’ নিখুঁতভাবে করতে চাইলে ব্যায়ামের নামগুলো ইউটিউবে সার্চ দিয়ে দেখে নিতে পারেন। এই ব্যায়ামগুলো অভ্যাস করার পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে সুন্দর থাকুন ও সুস্থ থাকুন।