ফেসবুক যেন টেক্সটবুক ভুলিয়ে না দেয়: পলক
|
২২ আশ্বিন ১৪২৩ |
Friday, October 7, 2016
নিউজ বাংলাদেশ, ঢাকা: শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি জ্ঞান দেওয়ার পাশাপাশি এর অপব্যবহার রোধে ভূমিকা রাখতে শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
শুক্রবার রাজধানীতে পঞ্চম জাতীয় শিক্ষক সম্মেলনে এ আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আপনারা মন দিয়ে আইসিটি শেখাবেন। সঙ্গে সঙ্গে এটাও খেয়াল রাখবেন, যাতে কেউ আইসিটির অপব্যবহার করতে না পারে। আপনাদের শিক্ষার্থী ও সন্তানেরা ফেসবুক আইডিগুলো দয়া করে পরিদর্শন করবেন।
‘ফেসবুকে আসক্ত হয়ে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা যেন টেক্সটবুক ভুলে না যায় সেটাও কিন্তু আমাদের দেখতে হবে।’
তেজগাঁওয়ে আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাংলাদেশ লিটারেসি অ্যাসোসিয়েশন’ আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ওই সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রতিমন্ত্রী।
কর্মক্ষম জনসংখ্যাকে আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার মত করে ‘তৈরি করে দিতে’ শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড উপভোগ করছি, যাতে ৭০ শতাংশ জনসংখ্যা ৩৫ বছরের নিচে। অর্থাৎ আমাদেরকে তারুণ্যের অফুরান যে শক্তি সেটাকে কাজে লাগাতে হবে।’
পলক বলেন, সত্তরের দশকে নাইজেরিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়া একই সঙ্গে ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ কাজে লাগানোর সুযোগ পেয়েছিল। দক্ষিণ কোরিয়া সেই তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এখন অর্থনীতির শক্তিশালী একটি দেশ। কিন্তু নাইজেরিয়া তা না পারায় সেভাবে উন্নত হতে পারেনি।
বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীকে প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত করার মাধ্যমে এই ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ এর সর্বোচ্চ সুবিধা নেওয়র সুযোগ শিক্ষকরা করে দিতে পারেন বলে মন্তব্য করেন পলক।
জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়তে শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘১ লাখ ৭০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চার কোটি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। তাদের যদি আমরা নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে না পারি, মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়ে তুলতে না পারি, তাহলে আধুনিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারব না। আর সেখানেই শিক্ষকদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব এবং কর্তব্য।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, তার ছোটোবেলায় বলা হত- বড় হয়ে সফল হতে চাইলে অংক, ইংরেজি, বিজ্ঞান শিখতে হবে। আর এখন কেউ সফল হতে চাইলে তাকে অংক, ইংরেজি ও বিজ্ঞানের পাশাপাশি আইসিটিও শিখতে হবে।
‘সে যদি প্রোগ্রামিং না পারে, কোডিং করতে না পারে তাহলে সময়ের উপযোগী সে হবে না। যে কোনো পেশায় আসতে হলে আইটিতে দক্ষ হতে হবে।’
বাংলাদেশের শিক্ষকরা আইসিটি শিক্ষাকে আপন করে নিয়েছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষক বাতায়ন ওয়েবসাইটে ৯০ হাজার শিক্ষক নিবন্ধিত। সেখানে ৬০ হাজার ডিজিটাল কনটেন্ট আমাদের শিক্ষকরা যুক্ত করেছেন। এটা শুনে সারা পৃথিবীর মানুষ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।’
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী অনুষ্ঠানে বলেন, সিলেটে খাদিজাকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনায় বদরুলের শিক্ষক পরিচয় বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। এ রকম কিছু দুর্বৃত্ত শিক্ষকের জন্য যেন শিক্ষকতা পেশায় কোনো কলঙ্ক না আসে সেজন্য শিক্ষক সমাজকে দায়িত্ব নিতে হবে।
গণসাক্ষরতা অভিযানের এ নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘শিক্ষকদের পেশাগত মর্যাদা ও বেতনের ক্ষেত্রে সরকারকে বিশেষ নজর দিতে হবে। পাশাপাশি আমরা শিক্ষকরাও যেন ক্লাস বাদ দিয়ে কোচিংয়ের পেছনে, গাইড বই এবং অর্থের দিকে না ঝুঁকি।’
অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অনারারি অধ্যাপক ড. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষক হতে গেলে নৈতিক শিক্ষায় বলিয়ান হতে হবে সবার আগে। এর সঙ্গে পেশাগত মর্যাদা ধরে রাখা এবং সুবিধা আদায়ের জন্যও কাজ করতে হবে।’
লিটারেসি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান কাজী রফিকুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আহ্ছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এম এম সফিউল্লাহ, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের নির্বাহী পরিচালক এম এহছানুর রহমান, লিটারেসি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নুরুল ইসলাম বক্তব্য দেন।
আহ্ছানিয়া মিশনের অধীনে থাকা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চার শতাধিক শিক্ষক সম্মেলনে অংশ নেন।