কালি পূজার মহাত্ম : ডেমরায় সম্পন্ন হলো কালী বা শ্যামা পূজা
|
১৬ কার্তিক ১৪২৩ |
Monday, October 31, 2016
মাহবুব মনি: ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও শান্তিপূণ পরিবেশে ডেমরায় সম্পন্ন হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী শ্যামা পূজা বা কালী পূজা। ২৯ সেপ্টেম্বর শনিবার সকাল থেকে দিবাগত রাত ৩ টা পর্যন্ত মহা ধুমধামের মধ্য দিয়ে ডেমরা ও সারুলিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে শেষ হয়েছে এক দিন এক রাত্রির এ সনাতনি পূজা। সারাদিন উপোস থেকে গভীর রাতে ভক্তরা ফুল-জল দিয়ে মায়ের চরণে প্রণাম জানিয়ে পূজা সম্পন্ন করেন। উৎসব আমেজের মধ্য দিয়ে ডেমরা বাউলের বাজার শ্রী শ্রী সুধারাম বাউল আশ্রমের কালিমাতা মন্দির, বক্সনগর কালিমাতা মন্দির, দেইল্লা পূর্ব-পশ্চিমপাড়া, ডগাইর শ্মশান, সারুলিয়া সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির মন্ডপসহ ৮ মন্ডপে সম্পন্ন হয়েছে শ্যামা পূজা। পূজা উপলক্ষ্যে পাঠা বলিও করা হয়। দেখা গেছে, পূজায় স্থানীয় এবং আশপাশের হিন্দু ধর্মীয় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ ভিড় করেন। কালী পূজা উপলক্ষ্যে কালীমাতা মন্দিরগুলোতে সন্ধ্যা ৭ টায় ধর্মীয় আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। মন্দিরে মন্দিরে দীপাবলী উৎসবের অংশ হিসেবে সন্ধায় মোম বাতি প্রজ্জলন করা হয়। আরও দেখা গেছে, কালী পুজার দিন হিন্দু সম্প্রদায় সন্ধ্যায় তাদের বাড়িতে ও শ্মশানে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে স্বর্গীয় পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের স্মরণ করেন। এটিকে বলা হয় দীপাবলী।
জানা যায়, কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে সাধারনত শ্যামা পূজা বা কালী পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। হিন্দু পূরাণ মতে মা কালী দেবী দুর্গারই একটি শক্তি। সংস্কৃত ভাষার ‘কাল’ শব্দ থেকে কালি নামের উৎপত্তি। কালীপূজা হচ্ছে শক্তির পূজা। জগতের সকল অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভশক্তির বিজয়ের মধ্যেই রয়েছে কালীপূজার মাহাত্ম। কালী বা কালিকা হলেন একজন হিন্দু দেবী। তাঁর অন্য নাম শ্যামা বা আদ্যাশক্তি। প্রধানত শাক্ত সম্প্রদায় কালীপূজা করে থাকে। তন্ত্র অনুসারে, কালী ১০ মহাবিদ্যা নামে পরিচিত ১০ জন প্রধান তান্ত্রিক দেবীর প্রথম। শাক্ত মতে, কালী বিশ্বব্রহ্মান্ড সৃষ্টির আদি কারণ। বাঙালি হিন্দু সমাজে কালীর মাতৃরূপের পূজা বিশেষ জনপ্রিয়। পুরাণ ও তন্ত্র সাহিত্যে কালীর বিভিন্ন রূপের বর্ণনা পাওয়া যায়। সে মতে দেবী তার ভক্তদের কাছে দক্ষিণাকালী, ভদ্রকালী, চামুন্ডি, সিদ্ধকালী, গুহ্যকালী, শ্মশানকালী, মহাকালী, রক্ষাকালী ইত্যাদি। আবার বিভিন্ন মন্দিরে ব্রহ্মময়ী, ভবতারিণী, আনন্দময়ী, করুণাময়ী ইত্যাদি নামে কালী প্রতিমা পূজা করা হয়। এসব রূপের মধ্যে দক্ষিণাকালীর বিগ্রহই সর্বাধিক পরিচিত ও পূজিত। দক্ষিণাকালী চতুর্ভূজা। তাঁর চার হাতে খড়্গ, অসুরের ছিন্ন মুন্ড, বর ও অভয়মুদ্রা রয়েছে। তার গলায় রয়েছে নরমুন্ডের মালা। দেবীর গায়ের রং কালো। মাথায় আলুলায়িতত চুল এবং তিনি শিবের বুকে ডান পা আগে রেখে দন্ডায়মান।
আরও জানা যায়, ব্রহ্মযামল নামক তন্ত্রগ্রন্থের মতে, কালী বঙ্গদেশের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। আশ্বিন মাসের অমাবস্যা তিথিতে দীপান্বিতা কালীপূজা বিশেষ জাঁকজমক সহকারে পালিত হয়। এছাড়া মাঘ মাসের চতুর্দশী তিথিতে রটন্তী কালীপূজা ও জ্যৈষ্ঠ মাসে ফলহারিণী কালীপূজাও বিশেষ জনপ্রিয়। কোথাও কোথাও প্রতি অমাবস্যা এবং প্রতি মঙ্গলবার ও শনিবারে কালীপূজা হয়ে থাকে। তাছাড়া দুর্গাপূজার মতো কালীপূজাতেও গৃহে বা মন্ডপে মৃন্মময়ী প্রতিমা নির্মাণ করে পূজা করা হয। মন্দিরে বা গৃহে প্রতিষ্ঠিত প্রতিমাতেও কালীপূজা করা হয়। মধ্যরাত্রে তান্ত্রিক পদ্ধতিতে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। দেবীকে ছিন্নমস্তকসহ বলির পশুর রক্ত, মিষ্টান্ন, অন্ন বা লুচি, মাছ ও মাংস উৎসর্গ করা হয়। গৃহস্থ বাড়িতে সাধারণত অতান্ত্রিক ব্রাহ্মণ্যমতে আদ্যাশক্তি কালীর রূপে কালীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, কালী শ্মশানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। এই কারণে বিভিন্ন অঞ্চলে শ্মশানে মহাধুমধামসহ শ্মশানকালী পূজা অনুষ্ঠিত হয়।