করোনা আক্রান্ত নাফিয়া হাসপাতালে ১০ দিন যেমন ছিলেন
|
৮ বৈশাখ ১৪২৭ |
Tuesday, April 21, 2020
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ফাইজ নাফিয়া রহমান নামে এক নারী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ১০ দিন এই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন তিনি। তবে এই ১০ দিন বেশকিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন ফাইজ।গত রোববার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে স্ট্যাটাস দিয়ে সেই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন তিনি। পাঠকদের জন্য স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো-
‘৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় কোভিড-১৯ পজিটিভ রিপোর্ট আসার পর দ্বিধায় পরে গেছিলাম কোথায় থেকে treatment নেব। আইইডিসিআর-এর একজন doctor বলল আপনার যেহেতু তেমন কোনো symptoms নেই, তাই আপনি বাড়িতে থেকেই treatment নিতে পারেন। বাসায় বয়স্ক বাবা-মা আর ছোট ভাগনে থাকায় তাদের safety এর কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিলাম hospital এর service যতই খারাপ হোক hospital এই যাব। আইইডিসিআর আমার এ সিদ্ধান্তের কথা জানতেই ওরা আমাকে কুয়েত বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের control room এর number দিল। Call দিলাম অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর জন্য।রাত ১০টার দিকে অ্যাম্বুলেন্স এ করে রওনা দিলাম হাসপাতালের উদ্দেশে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে পৌঁছলাম। আমাকে রুমে পাঠানোর আগেই এক doctor আমার সব details নিয়ে নিল।
Hospital এ ছিলাম ১০ দিন। এই ১০ দিনে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। facebook খুললেই অনেক কিছু দেখা যায়- যেমন : ছেলে করোনা সন্দেহে মাকে জঙ্গলে ফেলে চলে গেছে। আবার করোনা আক্রান্ত বাবার লাশ নিতে অস্বীকৃতি। এই রকম news এ যখন facebook এর news feed ভর্তি ঠিক তখনি এই hospital এ আমার চোখের সামনে পৃথিবী তার অন্য রূপ মেলে ধরলো। সেই পৃথিবী ভালোবাসার। একে অপরের পাশে থাকার।
তাইতো কোভিড-১৯ পজিটিভ wife এর পাশে থাকার জন্য, সাহস যোগানোর জন্য সুস্থ husband ও hospital এ ভর্তি হয়েছে। অসুস্থ মা-বাবাকে সেবা করার জন্য নিজের life risk নিয়ে মেয়েও থেকে গেছে hospital এ। ২৪ ঘণ্টা কোভিড-১৯ আক্রান্ত প্রিয়জনেদের সেবা করে যাচ্ছে তারা। হাতের উপর হাত রাখা খুব সহজ নয় সারা জীবন বইতে পারা সহজ নয়।
কিন্তু যারা বইতে পারে তাদের জন্যই আছে উত্তম প্রতিদান। আর সেই প্রতিদান আসে পরম করুনাময় আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে। আর তাই আল্লাহর অশেষ রহমতে আর মেহেরবানীতে আমি চলে আসার দিন পর্যন্ত এই মহান হৃদয়ের অধিকারী মানুষদের কোভিড-১৯ নেগেটিভ ছিল। এত নেতিবাচক খবরের ভিড়ে এই রকম ভালোবাসা, বিশ্বাস আর সাহসিকতার গল্পগুলো অল্প হলেও নতুন করে বাঁচতে নতুন করে ভাবতে শেখায়।
আরও এক case দেখলাম..কোভিড-১৯ শুধ জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্টতেই থেমে নেই.. এটা আসে বিভিন্ন symptoms নিয়ে। আমি যখন আইইডিসিআর এ জানালাম আমার তো জ্বর-কাশি-শ্বাসকষ্ট কিছুই নেই…যে গলা ব্যথা ছিল ওটাও Antibiotic নেওয়ার পর অনেকটাই কমে গেছে.. গত ১৯ দিন আমি আর আমার পরিবারের কেউ ঘরের বাইরে যাইনি…! আমার কীভাবে positive আসলো!!
আমার প্রশ্নের উত্তরটা ছিল এই রকম যে-দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ লোকের পজিটিভ আসবে যদি test করানো হয়। কিন্তু এদের কোন symptoms নেই। Virus টা ওদের আক্রান্ত করে ঠিকই কিন্তু কিছু বোঝার আগেই রোগী ভালোও হয়ে যায়। হাসপাতালেও তার নমুনা দেখলাম কয়েকটা। পুরান ঢাকার দুইটা family এর সাথে পরিচয় হয়েছে..
১. লোকটি hospital এ admit হয় কোভিড-১৯ পজিটিভের সব লক্ষণ নিয়ে।পরিবারের অন্যান্যদের কেউ যখন test করানো হলো, তখন দেখা গেল উনার স্ত্রী ও এক ছেলের positive। কিন্তু বাকি দুই ছেলের negative। আর আরও আশ্চর্যের ব্যাপার হলো Positive স্ত্রী আর ছেলের কোনো symptoms ছিল না। আর এখন পর্যন্ত নেই। ওরা চাইলেই ঘরে বসেই treatment নিতে পারত। কিন্তু আমরা জাতি হিসেবে এতটাই নিম্নমানের যে বাসার বাড়িওয়ালা ওদের বাসা থেকে বের করে দেওয়াতে hospital এ ভর্তি হতে বাধ্য হয়েছে। যাইহোক লোকটি এখন পুরোপুরি সুস্থ। আশা করি ২-৩ দিনের মধ্যে full family release পেয়ে যাবে।
২. আমার দেখা পুরান ঢাকার ২ নাম্বার family এর কথা বলি। এই Uncle (বয়স আুমানিক ৬৫+) এর Positive ধরা পরে শুধুমাত্র diarrhea symptoms নিয়ে। দুদিন পর উনার wife ভর্তি হলো করোনার সব symptoms নিয়ে। এর দুদিন পর উনাদের ছেলে ভর্তি হল শুধুমাত্র কাশি নিয়ে.. যদিও একই সাথে ছিল তারপরও ছেলের wife আর ওদের ছেলে-মেয়েদের negative ছিল। আমি আসার দিন দেখে আসছি uncle অনেকটাই সুস্থ আর aunty-র ও জ্বর চলে গেছে শুধু হালকা শ্বাসকষ্ট আছে.. ওইটাও চলে যাবে ইনশাআল্লাহ.. হতেই পারে next week এ হয়তো এই family ও release পেয়ে যাবে।
আরও একটা ঘটনা বলি যারা ICU নিয়ে ভয়ে আছেন তাদের জন্য.. এক ভাইয়া করোনা positive নিয়ে ভর্তি হয় ৫ এপ্রিল.. অবস্থা অনেক খারাপ থাকায় উনাকে ICU তে নিয়ে যাওয়া হয়। উনার ভাষ্যমতে ICU-তে ২৪ ঘন্টা nurse থাকে (এই information তাদের জন্য যারা ভাবেন nurse-রা শুধু ঘুমাইতেছে দেশের এই crisis moment এ)। যাই হোক উনি করোনার সাথে ICU-তে ৩ দিন fight করে normal ward এ চলে আসেন ৯ এপ্রিল। হয়তো গতকাল উনার release হয়ে গেছে।
আমি hospital এর যে floor এ ছিলাম সেখানে বেশিরভাগ এর অবস্থাই অনেক stable ছিল.. এই ১০ দিনে আমি মৃত্যু দেখেছি দুইজনের.. আল্লাহ যেন উনাদেরসহ আরও যারা করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সবাইকে কবরের আজাব মাফ করেন এবং বিনা হিসেবে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করেন.. সৃষ্টিকর্তার কাছে এই প্রার্থনা করি.. আমিন।।
এবার আসি doctor দের নিয়ে যাদের চুলকানি আছে.. এই ১০ দিনের এমন একটা দিনও ছিল না যেদিন doctor রা visit এ আসেননি। প্রতিদিন দুইবার করে round দিয়ে গেছেন.. রোগীদের সাহস দিয়ে গেছেন.. রোগীদের কথা শুনেছেন.. সেই হিসেবে প্রয়োজনীয় advise দিয়েছেন.. যে রোগের কোনো medicine এখনো পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নাই সেখানে আর কতটুকুইবা করবে doctor রা!!
আমাকে release দেওয়ার আগের দিন এক doctor আমাদের বলেছিল, ‘আপনারা release নিয়ে চলে যাবেন আর আমরা এখানে admit হব!!’ কুয়েত বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ হাসপাতালের সব doctor-nurse দের সবারই sample নিয়ে গিয়েছিল আইইডিসিআর। কারণ ওরা অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল.. !! তাই বলতেছি doctor nurse দের সম্মান করতে না পারেন at least গালি দিয়েন না.. একবার শুধু ভেবে দেখুন বর্তমান আক্রান্তের সংখ্যা এখনো ২ হাজার এর মধ্যে আছে। আর এখনি যদি সব doctor-nurse রা অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে USA, Espana, Italy এর মতো অবস্থা হলে কে আপনাকে treatment দিবে?? সৈনিক ছাড়া তো আর যুদ্ধ করা যায় না..!! আর এই করোনা যুদ্ধের আসল সৈনিক তো এরাই.. Doctor.. Nurse..!!!
সবশেষে এই hospital নিয়ে কিছু বলব.. এই ১০ দিন ৩ বেলা নিয়মিত খাবার-ওষুধ পেয়েছি…আগেই বলে রাখি ভাই এটা সরকারি Hospital তাই Isolation room এর কথা মাথাতেও আনবেন না,Vit-C Supplementary দরকার হলে বাইরে থেকে কিনে Hospital এ ঢুকবেন …একদমই ভাবতে যাবেন না যে এইগুলো Hospital provide করবে!
Hospital অনেক পরিস্কার কিন্তু আমরা জাতি হিসেবে অনেক নোংরা.. তাই পরিস্কারের মর্ম আমরা বুঝি না.. এইখানে গিয়ে বুঝতে পারছি যে জাতি ‘হাগার’ করার পর flash করতে পারে না সেই জাতিকে Isolation আর quarantine বুঝাতে আরও ১০০ বছর অপেক্ষা করতে হবে। মাথায় রাখবেন Government hospital এ এক ward এ 6 টা bed এর জন্য একটা toilet.. তাই নিজের নোংরাগুলো নিজে পরিষ্কার করে ফেললে তো কোনো দোষের কিছু নেই.. অন্তত আমি দেখি না.. Cleaner এর জন্য ফেলে রাখার কী দরকার রে ভাই..!! ওরাও তো মানুষ.. ওদেরোতো জানের ভয় আছে নাকি..!!
যাদের আইইডিসিআর নিয়ে অনেক অভিযোগ !
আমি আইইডিসিআর থেকে অনেক support পেয়েছি …আইইডিসিআর-এর সহযোগিতাতেই এত তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে পেরেছি..next wk এ আমার আরেকটা test করাবে। আর ওটা negative আসলেই বন্ধ room থেকেও মুক্তি পাব.. সেই দিনের আশায় আছি ….
উপরের সবকিছুই আমি এই ১০ দিনে যা দেখেছি যা বুঝেছি যা অনুভব করেছি তার বহি:প্রকাশ মাত্র…সম্পূর্ণ নিজস্ব মতামত। সাবধানে থাকবেন.. যেহেতু এই রোগের কোনো medicine নেই তাই একমাত্র উপায় হলো নিজের Immune System Boost Up করা.. করোনাকে ভয় না পেয়ে Immune System কে কাজে লাগান.. আর যদি এতটুকু symptomps আপনার মধ্যে দেখা দেয় লুকোছাপা না করে plz test করান.. Treatment নেন.. আশা করি আল্লাহর দয়ায় ভালো হয়ে যাবেন.. আজাইরা কারণে symptoms লুকিয়ে আশেপাশের মানুষদের আর doctor দের সংক্রামিত কইরেন না। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন আর আশেপাশের সবাইকে ভালো রাখুন। নিজের ভালো থাকাটা যেমন জরুরি তেমনি আশেপাশের সবাইকে ভালো রাখাটাও আমাদের নৈতিক ও নাগরিক দায়িত্ব। আর সবসময় পরম করুনাময় আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন দেখবেন উনি ঠিকই আমাদের আলোর পথ, আশার পথ দেখাবেন….।’