দেশীয় ভেন্টিলেটর তৈরির সফলতা চূড়ান্ত পথে
|
১৭ বৈশাখ ১৪২৭ |
Thursday, April 30, 2020
ভেন্টিলেটর যন্ত্রের সফল প্রোটোটাইপ বা নমুনা তৈরির প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে দেশ। লাগাতার গবেষণা ও উন্নয়নের (আরএন্ডডি) মধ্যদিয়ে বানানো দেশীয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার প্রোপোটাইপ যান্ত্রিক বিবেচনায় সঠিকভাবে কাজ করছে। এখন মানব দেহে স্থাপনের পর সফলতা আসলেই উৎপাদনের কাজটি শুরু হবে। মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) ওয়াল্টনের তৈরি এমন একটি প্রোটোটাইপ ভেন্টিলেটরের ক্লিনিক্যাল যাত্রা সূচনা করবেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
বিশ্বে করোনা ভাইরাসের বিস্তারের কারণে ব্যাপক সংখ্যক ভেন্টিলেটর যন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এ পরিস্থিতিতে নিজেদের করা পিবি-৫৬০ মডেলের ছোট ভেন্টিলেটরের নকশা, সফটওয়্যারসহ সত্ত্ব উন্মুক্ত করে দেয় বিশ্বখ্যাত মেডিকেল পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মেডট্রনিক, যার প্রধান বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ওমর ইশরাক। সে অনুযায়ী দেশে দ্রুততম সময়ে ভেন্টিলেটর তৈরি করতে প্রায় ২০ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা আর এন্ড ডি শুরু করে।
বিষয়টি সমন্বয় করছে সরকারের একসেস টু ইনফরমেশন প্রকল্প, এটুআই। টানা দিনরাত চেষ্টার পরও যন্ত্রটি তৈরি করতে কমবেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সবাইকেই। মূলত যন্ত্রটির সার্কিট ডিজাইন, ফার্মওয়্যার বা পরিচালনার সফটওয়্যার ও মেকানিক্যাল ডিজাইন মেডট্রনিক সরবরাহ করলেও সেসব দিয়ে পরিপুর্ণ একটি যন্ত্র বানাতে আরো অনেক বিষয় থাকে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। ভেন্টিলেটর তৈরিতে এটুআইয়ের সমন্বয়কারী কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ জুয়েল জানান, তিনস্তর বিশিষ্ট সার্কিট বানানো, কম্পোনেন্ট যোগাড় করা ইত্যাদি আমাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। যন্ত্রটি তৈরির চেষ্টা করতে গিয়ে নানা জায়গায় আটকে যাচ্ছিলেন সবাই। আমরা এসব সমন্বয় করতে সবাইকে একই প্লাটফরমে নিয়ে আসি। সবাইকে নিয়ে অনলাইন বৈঠক করছি। এতে অনেক কাজ সহজ হয়ে যাচ্ছে। আমরা খুবই আশাবাদী।
ফারুক আহমেদ জুয়েল জানান, ভেন্টিলেটর বানানোর জন্য ওয়ালটন, মিনিস্টার, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি), বাংলাদেশ শিল্পকারিগরি সহায়তা কেন্দ্র, বিটাকসহ অনেক প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও ব্যক্তি কাজ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে এমআইএসটি অনেক দূর এগিয়েছে। ক্লিনিক্যাল টেস্টের আগে তাদের যন্ত্রের হাইটেম্পারেচারসহ কিছু সমস্যা ছিল। সেটা ঠিক করা হয়েছে। মিনিস্টার কোম্পানির তৈরি যন্ত্রটি গ্যাস ফ্লো এনাইলাজার টেস্টের পর ক্লিনিক্যাল টেস্টের জন্য পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া আমার সোর্স নামে এক উদ্যোক্তার তৈরি ভেন্টিলেটর যন্ত্রটিও প্রায় সম্পন্ন হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকালে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক ওয়াল্টনের প্রোটোটাইপের ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা কার্যক্রমের সূচনা করবেন। একটি হাসপাতালের আইসিইউয়ে ভর্তি এক রোগীর দেহে সেটি স্থাপন করা হবে। তবে ওই রোগী করোনায় আক্রান্ত নন। গোপনীয়তার স্বার্থে রোগী ও হাসপাতালের নাম প্রকাশ করা হয়নি। আইসিইউতে ডাক্তারদের সহায়তায় সেটি খুব সতর্কতার সঙ্গে স্থাপন করা হবে।
এর আগে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে এমআইএসটির একটি প্রোটোটাইপ এবং মিনিস্টার কোম্পানির একটি প্রোটোটাইপ ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার কথা জানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা। সব পরীক্ষায় সফল হলে উৎপাদনের দিকে যেতে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এরপরই মোল্ড তৈরি ও প্রয়োজনীয় উপকরণ আমদানী বা সংগ্রহ করে বাণিজ্যিক উ্যৎপাদন শুরু হবে।
প্রসঙ্গত, মেডট্রনিকের নকশার বাইরেও সাধারণ পদ্ধতিতে ভেন্টিলেটর তৈরির বিভিন্ন প্রচেষ্টাও করছেন অনেকে। এর মধ্যে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও ঢাকা কলেজ বিজ্ঞান ক্লাবের সদস্য সানি জুবায়েরে নাম সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে।