ব্যাকটেরিয়াল মহামারী
|
২১ বৈশাখ ১৪২৭ |
Monday, May 4, 2020
মো. আজিবুর রহমান : এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের ফলে করোনাভাইরাসের মতো হতে পারে ব্যাকটেরিয়াল মহামারি। বাংলাদেশে এন্টিবায়োটিক এর ব্যবহার অনিয়ন্ত্রিত। যে কোনো ফার্মেসিতে গেলেই অনায়াসে পাওয়া যায় এন্টিবায়োটিক। ব্যবহারে নেই কনো সতর্কতা, জানানো হয় না কোন মাত্রায় কতদিন খেতে হবে ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার নির্দেশনা। অপ্রয়োজনে অনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে এন্টিবায়োটিক। গ্রামের ডাক্তারদের সর্ব রোগের ঔষধে পরিনত হয়েছে এন্টিবায়োটিক এর ব্যবহার।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এন্টিবায়োটিক ব্যাবহার হচ্ছে তো সমস্যা কোথায়, অসুস্থ হলেতো ওষুধ খেতেই হবে। হ্যাঁ, ওষুধ খাবেন তবে অসুস্থ হলে সঠিক রোগ নির্ণয় করে সঠিক ওষুধ সঠিক মাত্রায় থেতে হবে। আমাদের একটু ঠাণ্ডা-জ্বর-হাঁচি কাশি হলেই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই ঔষধের দোকানে গিয়ে এন্টিবায়োটিক চাই। ওষুধের দোকানদার এন্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন নিজের ইচ্ছে মতো। কিন্তু বেশিরভাগ সাধারণ রোগের জন্য এন্টিবায়োটিক খাওয়ার প্রয়োজন হয় না। বেশিরভাগ অসুখ ওষুধ ছাড়াই ভালো হয়ে যায়।
অপ্রয়োজনে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে এবং সঠিক রোগের জন্য সঠিক এন্টিবায়োটিক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে না পারলে জীবাণু মরে না। উল্টো আরও শক্তিশালী হয়ে বাসা বাঁধে শরীরে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে জীবাণু না মরলে না মরবে, আরও শক্তিশালী কীভাবে হবে! এই প্রশ্নের উত্তর জানলেই বুঝতে পারবেন ব্যাকটেরিয়া কীভাবে করোনাভাইরাসের মতো মহামারি ডেকে আনতে পারে পৃথিবীতে।
কারণ আমাদের শরীরে রোগ সৃষ্টিকারী ক্ষতিকর জীবাণুর উপস্থিতিতে বিভিন্ন অসুখ হয়ে থাকে। তাই সুস্থ হওয়ার জন্য ক্ষতিকর জীবাণু মারা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। জীবাণু মারার জন্য সঠিক এন্টিবায়োটিক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে না পারলে জীবাণু মারা যায় না। বরং জীবাণু ওই এন্টিবায়োটিকটাকে জীবানুর জন্য ক্ষতিকর হিসেবে চিনে ফেলে। জীবাণুর শরীরে ওই এন্টিবায়োটিক এর বিরুদ্ধে স্বাভাবিকভাবেই প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। যেকারণে পরবর্তীতে ওই সঠিক ঔষধ সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করলেও আর জীবাণু মারা যায় না।
বুঝতে আরেকটু সহজ হবে যদি বুঝতে পারেন ভ্যাক্সিন মানুষের শরীরে কিভাবে কাজ করে বুঝতে পারলে। ভাইরাস মারার সরাসরি কোনো এন্টিবায়োটিক বা ঔষধ আবিস্কার হয়নি। কিন্তু প্রাণীর শরীরের এই নিজস্ব সারভাইভাল বেঁচে থাকার ক্ষমতা বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে জাগ্রত করা হয় ভ্যাক্সিনের মাধ্যমে। এখন জানা যাক ভ্যাক্সিন কি এবং কিভাবে মানুষের শরীরে কাজ অরে।
ভ্যাক্সিন হচ্ছে যে ভাইরাস আমাদের শরীরে অসুখ সৃষ্টি করে সে ভাইরাস এর অকার্যকর অবস্থা অথবা ওই ভাইরাসেরই টক্সিন অথবা ওই ভাইরাসের বাহ্যিক প্রোটিনের। ভাইরাসেরই টক্সিন অথবা ওই ভাইরাসের বাহ্যিক প্রোটিনের মাধ্যমে ভ্যাক্সিন তৈরি করা হয়। তার মানে হচ্ছে শরীরের ভিতরের জীবিত ভাইরাস মারার জন্য ঐ ভাইরাসকেই মৃত অথবা অকার্যকর অবস্থায় আমাদের শরীরে প্রবেশ করানো হয় যাতে আমাদের শরীর ঐ ক্ষতিকর জীবাণুটারকে চিনতে পারে এবং ঐ ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারে। তাই ভ্যাক্সিন নিদিষ্ট সময়ের ব্যবধানে তিনটি মাত্রার (ডোজ) মাধ্যমে শরীরে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করানো হয়। তখন আমাদের শরীর ওই অপরিচিত ক্ষতিকর জীবাণুটার বিরুদ্ধে এন্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারে। পরবর্তীতে ঐ জীবিত ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে এন্টিবডি ভাইরাস মেরে ফেলে।
এন্টিবায়োটিক এর ভুল ব্যবহারে ব্যাকটেরিয়া এন্টিবায়োটিকগুলোকে চিনে ফেলছে প্রতিনিয়ত এবং ব্যাকটেরিয়ার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা এন্টিবডি তৈরি হচ্ছে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ সেবন করে ও অপ্রয়োজনীয় এন্টিবায়োটিক সেবন করে ব্যাকটেরিয়ার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা এন্টিবডি তৈরি করতে সাহায্য করছি আমরা নিজেরাই।
রোগ নির্ণয় করে জীবাণুটা মারার জন্য কার্যকর এন্টিবায়োটিকটি প্রয়োগ করতে হবে। আবার সঠিক এন্টিবায়োটিক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ না হলে জীবাণু মরতে মরতে বেঁচে যাবে এবং আরও শক্তিশালী আকার ধারণ করবে।
কিন্তু খুব ভয়ের বিষয় হচ্ছে অনিয়ন্তিতভাবে ব্যাবহার করার ফলে বেশিরভাগ এন্টিবায়োটিকে এখন আর জীবানু মারা যাচ্ছে না। মানে এন্টিবায়োটিকগুলো জীবাণুর শরীরে রেজিস্ট্যান্স হয়ে গেছে। এন্টিবায়োটিক আর কাজ না করলে সাধারণ যে কোন সংক্রমণ থেকে মানুষ মারা যাবে।
হাজার হাজার জীবাণু আমাদের খেয়ে ফেলার জন্য সর্বদা উদগ্রীব হয়ে আছে। আমরা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়ে বেঁচে আছি। আর যখন প্রতিরোধ করতে পারি না তখন জীবাণু মারার জন্য শরণাপন্ন হতে হয় এন্টিবায়োটিকের কাছে। সেই এন্টিবায়োটিকগুলো আমরা অযাচিত ব্যাবহার করে জীবাণুগুলোর শরীরে এন্টিবায়োটিক এর বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে ফেলছি। এন্টিবায়োটিক কাজ না করার জন্য অনেক মানুষ মারা যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। ভালো হচ্ছে না অসুখ।
এই এন্টিবায়োটিক এর সঠিক ব্যাবহার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন হসপিটাল ফার্মাসিস্ট। প্রতিটি হাসপাতালে হসপিটাল গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট থাকা প্রয়োজন। ফার্মাসিস্ট এন্টিবায়োটিক এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে রোগীদের এন্টিবায়োটিক এর ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা দেবে, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জানাবে তখনই নিশ্চিত হবে এন্টিবায়োটিক এর সঠিক ব্যবহার। সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও হসপিটাল ফার্মাসিস্ট বাধ্যতামূলক করতে হবে। প্রেসক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধে আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে আরও কঠোর হতে হবে।