ড. আব্দুল জলিল : পবিত্র রমজান মাসকে তিনটি দশকে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথমাংশকে রহমত, দ্বিতীয়াংশকে মাগফিরাত এবং তৃতীয়াংশকে নাজাত তথা দোজখ থেকে মুক্তির দশক বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে রহমতের দশক বিদায় নিয়েছে। আজ মাগফিরাতের প্রথম দিন। মাগফিরাত আরবি শব্দ। অর্থ হলো ক্ষমা। ২০ রমজানের সূর্যাস্তের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত এই দশকের সময়। মহান আল্লাহ তায়ালা রমজানের দ্বিতীয় দশকে তার বান্দাদের ক্ষমা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। মাগফিরাতের দশকে মুমিন-মুসলমান স্বীয় গুনাহ ক্ষমা করানোর জন্য আল্লাহর দরবারে হাজিরি দেন। সকল দোষ-ত্রæটির জন্য ক্ষমা চান। আল্লাহ তায়ালার একটি সিফতী নাম ‘ক্ষমাশীল’। তিনি ক্ষমা করা পছন্দ করেন। অপরাধী বান্দা, কৃত অপরাধের জন্য ক্ষমা চাইলে মহান আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে দেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আর তিনিই (আল্লাহ) তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং পাপগুলো ক্ষমা করে দেন।’ (সুরা শুরা : ১৫)
আল্লাহ তায়ালার দয়ার শেষ নেই। মাগফিরাতের এই দশকে তিনি তার বান্দাদের ক্ষমার পানি দ্বারা সিক্ত করেন। মুমিন বান্দারা বান্দারা আল্লাহর ক্ষমা থেকে কখনও বাদ পড়েন না। ক্ষমা পাওয়ার লক্ষ্যে ইবাদত ও দোয়ায় ব্যাকুল থাকেন। শুধু মাগফিরাতের দশকে ক্ষমা সীমাবদ্ধতা নয়। মহান আল্লাহ পুরো রমজানেই বান্দাদের ক্ষমা করেন। এজন্য এই মাসকে ক্ষমার মাস বলা হয়। হজরত সালমান ফারসী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসুল (সা.) শাবান মাসের শেষ তারিখের এক বক্তৃতায় আমাদের বললেন, ‘হে লোক সকল, তোমাদের প্রতি ছায়া বিস্তার করেছে একটি মহান মাস যা হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি এ মাসে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য একটি নফল কাজ করল সে ওই ব্যক্তির সমান হবে যে অন্য মাসের একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ কাজ করল সে ঐ ব্যক্তির সমান হলো যে অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায় করল। এটা ধৈর্যের মাস আর ধৈর্যের প্রতিদান হলো জান্নাত। এটা সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস, এটা সেই মাস যাতে মুমিনের রিজিক বৃদ্ধি করা হয়। যে এই মাসে কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে সেটা তার জন্য পাপরাশির ক্ষমা স্বরূপ হবে এবং দোজখের আগুন হতে মুক্তির কারণ হবে। এছাড়া তার সাওয়াব হবে সেই রোজাদার ব্যক্তির সমান কিন্তু রোজাদার ব্যক্তির সাওয়াবের কমতি হবে না। উপস্থিত সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাদের প্রত্যেক ব্যক্তি তো সামর্থ্য রাখেন না যা দ্বারা রোজাদারকে ইফতার করাবেন? রাসুল (সা.) বললেন, ‘আল্লাহ তায়ালা এ সাওয়াব দান করবেন ওই ব্যক্তিকে যে রোজাদারকে ইফতার করায় এক চুমুক দুধ বা একটি খেজুর দ্বারা কিংবা এক চুমুক পানি দ্বারা। যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তি সহকারে খাওয়ায় আল্লাহ তায়ালা তাকে আমার হাউজে কাউসার থেকে পানীয় পান করাবেন। যার পর জান্নাতে প্রবেশ পর্যন্ত পুনরায় তৃষ্ণার্ত হবে না। এটা এমন মাস যার প্রথম দশ দিন রহমত, মধ্যম দশ দিন মাগফিরাত আর শেষ দশ দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। আর যে এ মাসে নিজ দাসদাসীর প্রতি কার্যভার কমাবে আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দিবেন এবং তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে দিবেন।’ (মেশকাত)
আসুন, রমজানের এই ক্ষমার মাসে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকি আর চোখের অশ্রæ ফেলে বলি, ‘হে আল্লাহ তুমি দয়াময়, পরম করুনাময়। আমি ভুল করে অন্যায় করেছি, আবার তোমার কাছেই ফিরে এসেছি। তুমি আমায় ক্ষমা করো। তুমি ছাড়া তো ক্ষমা চাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই। তুমিই আমার মালিক, তোমার কাছেই আমার শেষ আশ্রয়।’
লেখক : উপ-পরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
|