করোনা ভাইরাসের তাণ্ডব বিশ্বজুড়ে এখনো অব্যাহত। কোনো দেশই এখনও পারেনি এর প্রতিশেধক আবিষ্কার করতে। ফলে সাধারণ মানুষের মতো সংশয়ে রয়েছে বিশ্বনেতারাও। করোনার বিষাক্ত ছোবলে বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ মানুষের প্রাণহানী ঘটেছে। করোনার তাণ্ডবে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সবার মনে। ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলেই কি করোনা মহামারি থেমে যাবে? নতুন করোনাভাইরাস যদি ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো ভাইরাসে পরিণত হয় শেষ পর্যন্ত, তাহলে টিকা আবিষ্কার হলেই কী সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? বিজ্ঞানীরা বলছেন, অতটা সহজ হবে না। তখন বিশ্বের ৭০ শতাংশ জনসংখ্যা বা সাড়ে পাঁচশ’ কোটি মানুষকে হার্ড ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য টিকা দিতে হবে। এ ছাড়া ভাইরাস ঠেকানো সম্ভব হবে না।
আবার টিকা আবিষ্কার হলেও যে তা সব দেশ সমানভাবে তা ব্যবহার করতে পারবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। উগ্র জাতীয়তাবাদী আবেশের জেরে টিকা উৎপাদনকারী ধনী দেশগুলো তো তখন দরিদ্র দেশগুলোর দিকে নজর নাও দিতে পারে। তবে বিজ্ঞানীরা যদি সত্যিই কভিড-১৯ এর কার্যকরী কোনো ভ্যাকসিন বা চিকিৎসা আবিষ্কার করতে সক্ষম হয় তাহলে সেটা বিশ্বের সব মানুষের জন্য ‘ফ্রি’ হওয়া উচিত বলে মত দিয়েছেন বিশ্বের বর্তমান ও অতীত অনেক নেতা।
বৃহস্পতিবার (১৪ মে) দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, সেনেগালের প্রেসিডেন্ট ম্যাকি স্যাল, ঘানার প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-আদোর সহ ১৪০ জনের বেশি সাবেক ও বর্তমান রাষ্ট্রনেতার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ আহ্বান জানানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ভ্যাকসিন জাতিগুলোর মধ্যে ভাগাভাগি না করলে কোনো ভ্যাকসিনই করোনাভাইরাস বিতাড়িত করতে পারবে না। আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের আওতাধীন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতি নির্ধারক প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলির (ডব্লিউএইচএ) বার্ষিক সভার আগে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে এমন খোলা চিঠি প্রকাশ করলেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ।
চিঠিতে আরো বলা হয়, নিরাপদ ও কার্যকরী কোনো ভ্যাকসিন পাওয়া গেলে তা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার নিশ্চয়তা দানে সরকারগুলো এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দ্রুত, বেশি করে উৎপাদন করতে হবে। বিনামূল্যে সব দেশে সবার জন্য এটা সহজলভ্য করতে হবে। কভিড-১৯ সংক্রান্ত সব ধরনের চিকিৎসা, ডায়াগনস্টিক ও অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম করতে হবে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট শওকত আজিজ, নেদারল্যান্ডসের সাবেক প্রেসিডেন্ট জান পিটার বালকেনেন্দে, পর্তুগালের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসে মানুয়েল বারোসো, যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন, নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্ক, স্পেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফিলিপ গঞ্জালেস।
ফ্রান্সের ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট কম্পানি সানোফি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরি করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম চালান পাঠানোর জন্য মজুত করা হচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ার প্রাক্কালে ভ্যাকসিন নিয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের এই আহ্বান আসলো।