উপ-নির্বাচন ঢাকা-৫ : অনলাইনে সরব সম্ভাব্য প্রার্থীরা
|
২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭ |
Saturday, June 6, 2020
মো. শফিকুল ইসলাম,ঢাকা: ঢাকা-৫ উপ-নির্বাচনে অনলাইনে সরব হয়ে উঠেছে অন্তত হাফ ডজন মনোনয়ন প্রত্যাশী। গত ৬ মে প্রয়াত সাংসদ হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যুতে শূন্য হয়েছে রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ন নির্বাচনী এলাকা ঢাকা-৫ আসন। এই আসনটি এক সময় বিএনপি-জামায়াতের ঘাটি হিসেবে পরিচিত ছিল। রাত-বিরাতে পরিশ্রম করে ঘরে ঘরে নৌকার কর্মী তৈরি করার মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগের ঘাটিতে পরিনত করেছিলেন প্রয়াত সাংসদ হাবিবুর রহমান মোল্লা। সদ্য এই প্রবীণ সাংসদের মৃত্যুর পর পরই নিজেদের প্রার্থীতার জানান দিতে শুরু করেন এই আসনের সম্ভাব্য দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। শুধু তাই নয়, মনোনয়ন প্রত্যাশী ওইসব নেতাদের পক্ষে তাদের কর্মী সমর্থকরাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান দিচ্ছেন,অমুক ভাই-তমুককে ঢাকা-৫ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি হিসেবে দেখতে চাই।
যদিও করোনা সঙ্কটের কারণে এই আসনের উপ-নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক পক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। তবে করোনা সঙ্কটের কারণে ফেসবুকসহ অনলাইনের বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার প্রচারণায় জোর দিচ্ছেন বেশি। পাশাপাশি কেউ কেউ নিজেদের প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করাতে অসহায় মানুষদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রি বিতরণসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন। এসব কর্মসূচির আড়ালে থাকছে নিজেদের দলের প্রার্থীতা ঘোষণা।
এদিকে ঢাকা-৫ আসনে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের অন্তত অর্ধ ডজন নেতা ইতিমধ্যে নিজেদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে আগাম প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। ঢাকা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে দিনক্ষন ঘোষণা না হলেও প্রার্থীরা নিজেদের জানান দিতে অনলাইনে শুরু করেছে প্রচার প্রচারণা। ছবি, পোস্টার, ভিডিও, গ্রাফিকসসহ নানা উপায়ে তাঁরা ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন। প্রচারণায় ফেসবুক, ওয়েবসাইট, ইউটিউব, টুইটারসহ নানা মাধ্যম ব্যবহৃত হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ৬ মে হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। শূন্য আসনে সাধারণত নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের নিয়ম রয়েছে। তবে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে নির্ধারিত সময়ে প্রথম দফায় ভোট করতে না পারায় ‘দৈব-দূর্বিপাকের কারণে’ সাংবিধানিকভাবে পরবর্তী ৯০ দিন সময় রয়েছে নির্বাচন কমিশনের হাতে। তবে করোনা সঙ্কটের মধ্যেই এই আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মাঠে নেমেছেন। যদিও এখনো প্রয়াত এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার অকাল মৃত্যুতে শোক কাটিয়ে উঠকে পারেনি কর্মী-সমর্থক ও পরিবারের সদস্যরা।
আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার বড় ছেলে ও ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজল, যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনিরুল ইসলাম মনু, সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ মুন্না, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন ও আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য নেহরীন মোস্তফা দিশি। এছাড়াও শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. শাহে আলম মুরাদ ও বর্তমান সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী। মন্নাফী জানান, দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা ঢাকা-৫ আসনে আমাকে মনোনয়ন দিলে সততা ও নিষ্ঠার সাথে ওই নির্বাচনী এলাকার জনগনের স্বার্থে নিজেকে উজার করে দেবো। তবে দলের পরিচয় ব্যবহার করে কেউ অপরাধ করলে কঠোরভাবে দমন করা হবে। আর যারা দলের ইমেজ রক্ষায় নিয়োজিত থাকবে তাদের মূল্যায়ন করা হবে বলে জানান মন্নাফী। তবে এ বিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন ঢাকা মহানগর দক্ষিন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. শাহে আলম মুরাদ।
তবে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজল ১৯৯৬সাল থেকে এ পর্যন্ত পরপর ৫টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এলাকার মানুষের সাথেও তার বোঝাপোরা ভালো। তাছাড়া এই আসনের প্রতিটি ইউনিট-ওয়ার্ডকে ঢেলে সাজিয়ে বিএনপি-জামায়াত ও জঙ্গীদের প্রতিরোধের মাধ্যমে নাগরিক সমাজের শান্তিতে বসবাসে তার অপ্রণী ভুমিকা রয়েছে বলেও জানান তার ঘনিষ্টজনেরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য নেহরীন মোস্তফা দিশি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে যাচ্ছে। আমি ওই উন্নয়ন কাজের সাথে নিজে কে সম্পৃত্ত করতে পারলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করবো । এই এলাকার উন্নয়নে ঐহিত্যগতভাবে নিজের পরিবারের যোগসূত্র কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ আমাদের পরিবার থেকে যে সহযোগীতা পেয়েছে তা বিফলে যাবে না।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন বলেন, ছোটবেলা থেকেই দনিয়ার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনে যুক্ত থাকায় এ এলাকার মানুষের সাথে আমার নিবীড় সখ্যতা। দুঃসময়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি। সে অধিকার থেকেই দলীয় মনোনয়ন চাইছি।
আওয়ামী লীগ ছাড়াও মহাজোটের শরীক জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব মীর আবদুর সবুর আসুদ ১৪ দলের শরিক হিসেবে এই আসনে মনোনয়ন পেতে মাঠে তৎপর রয়েছেন। তবে মহাজোট থেকে মনোনয়ন না পেলেও এবার দলীয় মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত। যদিও পূর্বের নির্বাচনগুলোতে শেষ পর্যন্ত জোট ও দলের সিদ্ধান্তে একাধিকবার আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ছাড় দিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পাটির প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আবদুস সবুর আসুদ জানান, এলাকার উন্নয়নে তার প্রকৌশলী পিতা তথা তার পূর্বপুরুষেরা এই এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছেন। আর সারাদেশের মতো এই এলাকাতেও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ উন্নয়ন কাজ করেছেন। সেই পথ ধরে তিনি এখনো অবকাঠামো উন্নয়নসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছেন। এসব কারণে দলমত নির্বিশেষে তার জনপ্রিয়তা আছে বলে তিনি মনে করেন। এর আগে একাধিকবার তিনি মনোনয়ন চাইলেও ৫ জানুয়ারি নির্বাচন ও গত নির্বাচনে তিনি সরাসরি দলীয় মনোনয়ন পেয়ে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন বলেও জানান।