ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচনে আলোচনার শীর্ষে নেহরীন মোস্তফা দিশি
|
২০ আষাঢ় ১৪২৭ |
Saturday, July 4, 2020
নিউজ-বাংলাদেশ,ঢাকা:একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং নতুন মন্ত্রী সভা গঠনের মাধ্যমে দেশবাসিকে চমক দেখিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইভাবে প্রয়াত সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃতুতে শূন্য হওয়া ঢাকা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে দক্ষ, উচ্চ শিক্ষিত-সৎ ও মেধাবী ক্লীন ইমেজের প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়ে চমক দেখাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এই চমকের জন্য আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে এই আসনের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। যদিও অনেকে বলছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র বিশিষ্ট ক্রীড়াসংগঠক শহীদ শেখ কামাল ও পুত্রবধূ ক্রীড়াবিদ সুলতানা কামালের ভাতিজি, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য নেহরীন মোস্তফা দিশিই হতে পারেন ঢাকা-৫ আসনে নৌকার চমক। ঢাকা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে পরিবর্তনের অঙ্গিকার নিয়ে এবং চমকের প্রত্যাশায় দিশির নির্দেশনায় অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ-যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও কৃষকলীগ-শ্রমিকলীগসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। ইতিমধ্যে নেহরীন মোস্তফা দিশি প্রতিনিয়ত ডেমরা-যাত্রাবাড়ি এলাকার পাড়া-মহল্লা ও অনাচে-কানাচে বৃক্ষরোপন, বর্তমান ‘সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড তুলে ধরা এবং করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে করনীয়’ শীর্ষক মতবিনিময়-আলোচনা সভা-ওঠান বৈঠকসহ নানা ধরনের কাজের মধ্যদিয়ে কর্মীদের চাঙ্গা রেখেছেন। এতে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে জানান দিয়েছেন দিশি।
এদিকে ঢাকা-৫ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের আমলনামা এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেবিলে রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। এছাড়াও এই আসনটিতে প্রত্যেক মনোনয়নপ্রত্যাশীর আমলনামা বেশ কয়েকটি সংস্থা যাচাই-বাছাই করছে। ঢাকা-৫ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, প্রয়াত হাবিবুর রহমান মোল্লার বড় ছেলে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান সজল, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও শহীদ শেখ কামালের স্ত্রী শহীদ সুলতানা কামালের ভাতিজি নেহরীন মোস্তফা দিশি, যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মনিরুল ইসলাম মনু ও যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ মুন্না, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপনসহ অন্তত এক ডজন প্রার্থী। জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পাটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মাতুয়াইলের সন্তান মীর আব্দুস সবুর আসুদ আলোচনায় রয়েছেন। তৃনমূল ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ঢাকা-৫ আসনের দলীয় গ্রুপিং আছে। এই গ্রুপিং এর কারণে মোল্লা পরিবার থেকে কাউকে মনোনয়ন না দিলে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদকে প্রার্থী করা হতে পারে। তবে এসব কেবল দলীয় নেতাকর্মীদের ধারণা। সবকিছু নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর। আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও শহীদ শেখ কামালের স্ত্রী শহীদ সুলতানা কামালের ভাতিজি নেহরীন মোস্তফা দিশি নির্বাচনে প্রার্থী হবেন এবং তাকেই দলীয় ভাবে মনোনয়ন দেবে এমন প্রত্যাশাও রয়েছে ঢাকা-৫ এর জনগনের মাঝে। দলের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচনে কে হচ্ছেন নৌকার কা-ারী এটা দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই জানেন। তবে দীর্ঘদিন যাবত তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন শেখ পরিবারের পুত্রবধু সুলতানা কামালের ভাইয়ের মেয়ে নেহরীন মোস্তফা দিশি। এবার হয়তো তাকে মনোনয়ন দিয়ে ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচনে নতুন চমক দেখাতে পারেন শেখ হাসিনা। নেহরীন মোস্তফা দিশি আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও এটিএন নিউজ এর সিনিয়র সংবাদ পাঠিকা-জনপ্রিয় উপস্থাপিকা।
তাছাড়া পারিবারিক ঐতিহ্য, রাজনৈতিক অবস্থান ও আপদে-বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কারণে দল থেকে এই আসনে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে এমনটি প্রত্যাশা নেহরীন মোস্তফা দিশি। শেখ পরিবারের এই সদস্য বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে যাচ্ছে। ওই উন্নয়ন কাজের সাথে নিজেকে সম্পৃত্ত করতে পারলে আমি নিজে কে ধন্য মনে করবো। এই এলাকার উন্নয়নে ঐহিত্যগতভাবে আমার দাদা মরহুম দবির উদ্দিন আহমেদ মৃধা ২৫ বছর বৃহত্তর মাতুয়াইল ইউনিয়নের নেতৃত্ব দিয়েছেন সফলতার সাথে, যা ঐতিহ্যবাহী মাতুয়াইলে ইতিহাস হয়ে আছে এবং এ অঞ্চলের আপামর জনসাধারনের অন্তরে গেঁথে আছে। আমার বড় চাচা রফিক মৃধা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উপদেষ্ঠা ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কোষাধক্ষ্য ছিলেন। পুরো ঢাকা-৫ নির্বাচনী এলাকায় তিনি ছিলেন বটবৃক্ষের মতো। তিনি বলেন, ওই এলাকার সাধারণ মানুষ আমাদের পরিবার থেকে যে সহযোগীতা পেয়েছে তা বিফলে যাবে না। তবে এই আসনে নেতৃত্বের পরিবর্তন চাইছেন অনেকেই। সেক্ষত্রে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দীর্ঘ দিনের পরীক্ষিত সৈনিক যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ মুন্না। প্রয়াত সাংসদ হাবিবুর রহমান মোল্লার সাথে দীর্ঘদিন রাজনীতি করা এ নেতা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে অসংখ্যবার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। রাজপথের কর্মসূচিতেও সর্বদাই সরব ছিলেন। বিরোধী দলে থাকাকালীন সময় যাত্রাবাড়ী এলাকায় দলকে সংগঠিত রেখে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি নিজে উপস্থিত থেকে বাস্তবায়ন করেছেন। তাই এবার উপ-নির্বাচনে ঢাকা-৫ আসনের প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে তাকে মূল্যায়ন করা হবে বলে আশাবাদী হারুনুর রশিদ মুন্না। তবে যাত্রাবাড়ি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মনিরুল ইসলাম মনু’র সমর্থকদের দাবি, এবার ঢাকা-৫ আসনে নৌকার মনোনয়ন পাবেন কাজী মনিরুল ইসলাম মনু।
জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় যুব সংহতির সাবেক সভাপতি আব্দুস সবুর আসুদ। তিনি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে জড়িত। তিনি ২০০৮ ও ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এবার উপনির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে প্রত্যাশা করেন। জাতীয়র পার্টি বিরোধী দল হলেও মহাজোটগতভাবে। প্রসঙ্গত, সরকার দলীয় এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যুতে শূন্য হওয়া ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচন নভেম্বরের মধ্যে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর স্বাক্ষরিত কমিশনের একটি প্রজ্ঞাপন গত ২২ জুন জারি করা হয়েছে।
এরআগে গত ১০ মে রোববার সংসদের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমদ খান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে ঢাকা-৫ সংসদীয় আসনটি শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়। গত ৬ মে বার্ধক্যজনিত কারণে হাবিবুর রহমান মোল্লা মারা যান। ফলে ওইদিন আসনটি শূন্য হয়েছে বলে এরই মধ্যে গেজেট প্রকাশ করেছে জাতীয় সংসদ সচিবালয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচন আগামী ৩ আগস্টের মধ্যে সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। তাই পরবর্তী ৯০ দিন অর্থাৎ আগামী নভেম্বরের মধ্যে এ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধান অনুযায়ী, কোনো আসন শূন্য হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে ওই আসনের ভোটগ্রহণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই হিসেবে আগামী ৩ আগস্টের মধ্যে ভোট গ্রহণের কথা। কিন্তু করোনার কারণে সব নির্বাচন স্থগিত রেখেছে ইসি। এ ক্ষেত্রে দৈব-দুর্বিপাকজনিত কারণে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের হাতে সংরক্ষিত পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করবে সংস্থাটি।