সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমর ভূমিকা
|
৪ মাঘ ১৪২৭ |
Sunday, January 17, 2021
মীর আব্দুল আলীম :
সুশাসনের অর্থ নির্ভুল, দক্ষ ও কার্যকরী শাসন। সুশাসনের জন্য রাষ্ট্রের
ন্যায়পরায়ণ আচরণ, দুর্নীতি ও নিপীড়নমুক্ত স্বাধীন পরিবেশ ও নিরপেক্ষ এবং
স্বাধীন বিচার বিভাগ অপরিহার্য্য। আর সুশাসনের জন্য খুব বেশি প্রয়োজন
স্বাধীন ও শক্তিশালী গণমাধ্যম এবং স্বাধীন বিচার বিভাগ। স্বাধীন সংবাদ
মাধ্যম আর স্বাধীন বিচার বিভাগ ছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার রক্ষা
ও প্রশাসনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। স্বাধীন বিচার বিভাগ না
থাকলে বিচার বিভাগে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বৃদ্ধি পায়। যা কোন রাষ্ট্রের
জন্য সুখকর নয়। কোন রাষ্ট্রের সরকারের অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা ও ভুল
সিদ্ধান্তের কারণে সুশাসন বাধাগ্রস্ত হয়। সুশাসনের বড় অন্তরায় দুর্নীতি।
আর দুর্নীতির রাহুগ্রাস রাষ্ট্রের প্রাণশক্তিকে নিঃশেষ করে। আমাদের দেশে
অব্যাহত দুর্নীতি রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করছে।
দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রের সম্পদের অপচয় হয়, বণ্টনে অসমতা সৃষ্টি এবং
আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে। এ জন্য জনসচেতনতা অপরিহার্য্য। তা সুশাসনের
চাবিকাঠি বটে। জনগণ সচেতন না হলে, সরকার প্রশাসন যন্ত্র স্বেচ্ছাচারী হয়ে
ওঠে। কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা চর্চা সুশাসনের অন্তরায়। গণতান্ত্রিক চর্চা,
মূল্যবোধের বিকাশ, উপযুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও অর্থনৈতিক
ভারসাম্য সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন। এর সব কিছু ঠিকঠাক থাকতে
প্রয়োজন শক্তিশালী গণমাধ্যম। আর এ দেশের গণমাধ্য কখনই স্বাধীন ছিলো না।
এরশাদের জাতিয় পাটি, বিএনপি-জামায়াতের ক্ষমতাকালীন সময়, ওয়ান-ইলিভেন এমনি
বর্তমান সরকারের সময়ও গণমাধ্যম স্বাধীন তা বলা যাবে না। কখনো রাষ্ট্র
কখনো ক্ষমতাধরগণ সংবাদপত্রের স্বাধীনতার অন্তরায় হন। সংবাদপত্র স্বাধীন
না হলে যা হবার তাই হয় এবং হচ্ছে।
সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। সমাজের অসঙ্গতি দূর করার ক্ষেত্রে সংবাদপত্র
এবং সমাজ বিনির্মাণে সাংবাদিক তথা গণমাধ্যমের ভূমিকা দিনের আলোর মতো
স্পষ্ট। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সাংবাদিকদের ভূমিকা অপরিহার্য। সংবাদপত্রকে
সমাজের দর্পণ বলা হয়। এই দর্পণ তৈরি করেন সাংবাদিকরা। রাষ্ট্রের চতুর্থ
স্তম্ভ হিসেবে সরকার এবং বিরোধী দলের পথনির্দেশনা তৈরি করে দেয়
সংবাদপত্র। এর কারিগর হলো সাংবাদিক সমাজ। বর্তমানে ‘সুশাসন’ ও ‘গণমাধ্যম’
এ দুটি বিষয় পরস্পর গভীরভাবে সম্পৃক্ত। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সমাজ
ব্যবস্থায় দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা আর আইনের শাসনকে কেউ কেউ
বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছে। গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ¢ হিসেবে
তাদের সমুচিত জবাব দেয়ার অধিকার রাখে। কিন্তু এদেশের মিডিয়া কি করছে?
এক্ষেত্রে আমাদের গণমাধ্যমের ভুমিকা মোটেও জোড়ালো নয়। উল্টো কোনো কোনো
গণমাধ্যমকর্মী গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অপব্যবহার করে ক্ষেত্র বিশেষে
গ্রহণযোগ্যতা ও অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। এদেশে কিছু কিছু সংবাদপত্র
ব্যক্তিগত বিদ্বেষ, একপেশে খবর, অদূরদর্শী এবং পত্রিকার কাটতি বাড়ানোর
জন্য নৈতিকতা বিবর্জিত সংবাদ প্রচার করে বিচার বিভাগ তথা জনগণের মধ্যে
বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে কখনো কখনো। অনেক সময় মিডিয়া ট্রায়ালের ফলে বিচারক
এবং বিচার প্রার্থী জনগণ বিব্রত হয় যা অনভিপ্রেত এবং অনাকাঙ্খিত। তবুও
বলতে হয়, এদেশে সুশাসন যতটুকু প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে এজন্য গণমাধ্যমের ভুমিকা
অন্যতম। মানুষের তথ্য জানার অধিকার এবং গণমাধ্যমের তথ্য জানানোর গভীর
দায়বদ্ধতার প্রশ্নে সামাজিক অঙ্গীকার নিয়ে সংবাদপত্র প্রতিনিয়ত অতন্দ্র
প্রহরীর ভূমিকা পালন করছে।
আরেকটি বিষয় হলো সংবাদ প্রকাশের স্বাধীনতাই, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নয়।
জনস্বার্থে সবকিছু অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরার স্বাধীনতাই
গণমাধ্যমের স্বাধীনতার লক্ষ্য হওয়া বাঞ্ছনীয়। সাংবাদিকতার মহান পেশাকে
সমুজ্জ্বল রাখতে সকল সাংবাদিক বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করবেন, দেশের
বিদ্যমান সমস্যা ও সমাধানের বিষয়ে বস্তুুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ এবং প্রতিটি
উন্নয়নমূলক কাজ ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পর্যালোচনা করে জনগণের আস্থা
অর্জন করবেন। সমাজে বিদ্যমান নানাবিধ অসঙ্গতি, অন্যায়-অবিচার,
সাফল্য-ব্যর্থতা সংবাদিকদের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। এতে আপামর জনসাধারণের
পাশাপাশি সরকার ও দেশ উপকৃত হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশে সংবাদ এখন আর নিছক
কোনো তথ্য নয় বরং বিনোদন ও জ্ঞানের ভান্ডার; দেশের পরিবর্তনের অন্যতম
হাতিয়ার। অবাধ তথ্য প্রবাহের এ যুগে তাই সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার গুরুত্ব
উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সাংবাদিকদের
দেশপ্রেমের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশ ও জাতি গঠনে কার্যকরী ভূমিকা রাখা
জরুরী। গণমাধ্যমের সাথে যুক্ত অনেকেই সে ভুমিকা যথাযথভাবে পালনে সচেষ্ট।
অনেকে আবার স্বস্বার্থে দেশপ্রেমের চেতনা জলাঞ্জলী দিয়ে থাকেন। সংবাদ
মাধ্যম এবং গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে এটা মোটেও কম্য নয়।
‘সুশাসন’ বা গুড গভর্নেস মূলত একটি পশ্চিমা অভিধা। সুশাসন প্রতিষ্ঠা
দেশের উন্নয়ন, দেশের মানুষের সুখ শান্তি প্রতিষ্ঠার অন্যতম ভিত্তি।
সুশাসনের কোনো সুনির্দিষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ সজ্ঞা নেই। সুশাসন মানে ভালোভাবে
দেশ পরিচালনা বিষয়টিকে এ ভাবে সরলীকরণ করা যেতে পারে। যেমন- স্বচ্ছতা ও
জবাবদিহি প্রক্রিয়া বহুমুখী অংশীদারিত্ব, মানবাধিকার ও আইনের শাসন, দেশ
পরিচালনায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে ও পর্যায়ে মানুষের অংশগ্রহণ, রাজনীতিতে নানা
মতের চর্চা, একটি দক্ষ ও কার্যকর সরকারি খাত, শিক্ষা, তথ্য ও অন্যান্য
জ্ঞান আহরণের সুযোগ, জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন, সমতা ও ন্যায় বিচার,
দায়িত্বশীলতা, ঐক্য ও মূল্যবোধ ইত্যাদি। দেশের সার্বিক উন্নয়নকে টেকসই
করতে আইনের শাসনের ভিত্তিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
সরকারের কার্যকারিতা, আইনের শাসন এবং দুর্নীতির নিয়ন্ত্রণ, দায়বদ্ধতা,
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সহিংসতার অনুপস্থিতি, নিয়মবিধির প্রায়োগিকতা
সুশাসনের সূচক। এর ভিন্নতা হলেই দেশে সুশাসন থাকে না। সুশাসন প্রতিষ্ঠার
নানা দিকের মধ্যে দু’টি দিক অন্যতম। সরকার ও আমলাতন্ত্র, যারা দেশ শাসন
করে, একদিকের অবস্থানে দেশের মানুষ। দেশের জনগনই দেশের প্রকৃত মালিক। এ
দুইয়ের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি হলেই সমস্যা বাঁেধ। দেশে ব্যাপক উন্নয়ন
হচ্ছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা বাংলাদেশ এক সময় হবে সিঙ্গাপুর,
মালয়েশিয়া, কোরিয়া সেই স্বপ্ন দেখি আমরা। দেশে ফ্লাইওভার, মেট্রোরোল,
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, রকেট ট্রেন ইত্যাদি হচ্ছে। দেশের মানুষের আয়
বেড়েছে এর পরও সরকারের সাথে জনগনের ব্যবধান নেই বলা যাবে না। আমাদের দেশে
খুব সুশাসিত তাও বলা যাবে না। দেশে একবারেই সুশাসন নেই তাও না। যেটুকু
ফারাক আছে তা কমিয়ে আনা সম্ভব। দেশের সরকার ও আমলাতন্ত্র যদি দেশের
মানুষের কল্যাণে কাজ করে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই। দেশের মানুষের স্বার্থ
বিবেচনা না করে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকলে সুশাসন প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
তখনই দেশের মানুষের কষ্ট বাড়ে। তাতে দেশের অর্থনীতি বাঁধাগ্রস্ত হয়,
বিঘ্নিত হয় দেশের মানুষের দৈনন্দিন জীবনচারিতা।
এ কথা বলতেই হয় যে, নিয়মবিধির প্রতিপালন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা,
দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বা শিল্পোন্নত
দেশগুলোর চেয়ে লক্ষণীয়ভাবে অনেকটাই পিছিয়ে আছে। দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের
চেয়েও বাংলাদেশের সুশাসন পরিস্থিতি নেতিবাচক। এ অবস্থা আমাদের কাম্য হতে
পারে না। উপরোক্ত সূচক গুলোর পজেটিভ দিক তৈরিতে গণমাধ্যমের ভুমিকা
অপরিহার্য্য। এ ক্ষেত্রে আমাদের গণমাধ্যম কতটা ভুমিকা রাখতে পারছে? এ
ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভুমিকা যতটুকু তা সন্তুষ্ট হবার মত নয়। এ ব্যাপারে
গণমাধ্যমকে আরও জোড়ালো ভুমিকা পালন করতে হবে। একটি দেশে সুশাসন
প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অপরিহার্য। একটি রাষ্ট্র যখন এসব নিশ্চিত করতে
পারে তখনই বলা যায় যে, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে গণতন্ত্র গুণগত এবং দৃঢ়ভাবে
প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা,
ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব হলে গণমাধ্যমকে যথাযথ ভুমিকা পালন করতে হবে।
আমাদের দেশে এসব স্বাধীনতা খর্বে সংবাদপত্রের ভুমিকা মাঝেসাঝে জোড়ালো
থাকে না। কোন কোন গণমাধ্যম পক্ষপাতিত্বমূলক ভুমিকায় থাকে। সাংবাদিকদের
অনৈক্য এর অন্যতম কারন। সাংবাদিকদের ঐক্যে ও ভ্রাতৃত্বের অভাবে দেশের
সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অন্তরায় হয়। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও
অপরিহার্য। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ছাড়া গণতন্ত্রও অর্থহীন। আমাদের
সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাকস্বাধীনতা তথা
সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যা মৌলিক
অধিকার হিসেবে আমাদের মহান সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত হয়েছে। এর সাথে সুশাসন
প্রতিষ্ঠা নিবিড়ভাবে জড়িত।
রাজনৈতিক সরকারের ধরন যাই হোক, বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পরবর্তী
ধাপে যেতে হলে সুশাসনের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে,
এজন্য সরকারি প্রশাসন ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।
বর্তমানে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায়ও অনেকাংশে ত্রুটি থাকে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেয়া সিদ্ধান্ত প্রাতিষ্ঠানিক ব্যক্তিনির্ভর ও
কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এর পরিবর্তন প্রয়োজন। সরকারের
বিভিন্ন পর্যায়ে ক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়িয়ে নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার দিকে
যাওয়া জরুরী। সর্ব্বোপরি দেশের অব্যাহত দুর্নীতি নিয়ন্ত্রন করতে হবে।
সুশাসনকে কোনোভাবেই এড়িয়ে চলা কিংবা অবজ্ঞা করার অবকাশ নেই। সুশাসনের
অভাব আমাদের নাগরিক অধিকারকে প্রতিনিয়তই খর্ব করছে এটা বুঝতে হবে এবং
উপলদ্ধি করতে হবে সবাইকে। সুশাসনের অভাবে দেশ সমৃদ্ধির বদলে বিপর্যয়ের
দিকে ধাবিত হতে পারে। এ রকম বহু নজির বর্তমান বিশ্বে রয়েছে। বিশেষ করে
প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান ও আর্থিক খাতে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং সুশাসনের অভাব
গত এক দশকে গোটা অর্থনীতি ও প্রশাসনিক কাঠামোতে চরম অব্যবস্থা এবং
অবক্ষয়ের সৃষ্টি করেছে। বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটছে বিভিন্ন
আর্থিক প্রতিষ্ঠানে, প্রশাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনা
ঘটছে। সমাজে তথা রাষ্ট্রে ক্রমাগত উগ্রতা ও অসহিষ্ণুতা ছড়িয়ে পড়ছে। এই
উগ্রতা এবং অসহিষ্ণুতা মোকাবিলায় মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে। মানুষের মধ্যে
মানবিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তুলতে হবে। পরস্পরের প্রতি সহনশীলতা সৃষ্টি করতে
মানুষের শুভবোধ গুলোকে সামনে নিয়ে আসতে হবে। সন্ত্রাসবাদ জাতীয় এবং
আন্তর্জাতিক, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ। আইনের
শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে সন্ত্রাস আরও কমবে। তা করা জরুরী বটে।
বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ছাড়া গণতন্ত্র অর্থহীন। সাংবাদিকরা
ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে এর বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গঠন করতে অনন্য ভূমিকা
রাখতে পারেন। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায়, সমাজ ও রাষ্ট্রের ভারসাম্য
রক্ষায়, শ্রেণির-বিভেদ দূর করতে সামাজিক নিরাপত্তার পাশাপাশি মানুষের
মানবিক মর্যাদাও সমুন্নত রাখতে হয়। একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থায় তার নাগরিকদের
সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা সংবিধান তথা দেশের প্রচলিত আইনে
বহুভাবে বলা আছে। সামাজিক নিরাপত্তা বিধানের পরই আসে মানবিক মর্যাদার
প্রশ্ন। একজন নাগরিক যদি সামাজিক নিরাপত্তা পান তার পরই আসে মানবিক
মর্যাদার কথা। মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রথমে দরকার সামাজিক
নিরাপত্তা বিধান করা। এক্ষেত্রে সাংবাদিক সমাজ তাদের লেখনীর মাধ্যমে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
সব কিছুর পরও বলতেই হয় এদেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া রাষ্ট্রের
চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে জনগণের আশা-আকাঙ্খা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি এবং লক্ষ্য
ও উদ্দেশ্য ইত্যাদি বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন করার
গুরুদায়িত্ব পালন করে আসছে। মিডিয়া রাষ্ট্রের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে
সময়োপযোগী সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে নিরন্তর সহযোগিতা করে সুশাসন
প্রতিষ্ঠায় যুগান্তকারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ ক্ষেত্রে
গণমাধ্যমের আরও জোড়ালো ভুমিকা আশা করছি আমরা।
@ লেখক- মীর আব্দুল আলীম, সাংবাদিক, গবেষক ও কলামিস্ট।