ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু
|
৬ মাঘ ১৪২৭ |
Tuesday, January 19, 2021
সরকারের পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী আগামী ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার টিকা বাংলাদেশে চলে আসবে। প্রস্তুতিপর্বের সব ধাপ শেষে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই দেশে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হবে। করোনার টিকা নিতে হবে স্বেচ্ছায়। ভ্যাকসিন নেওয়ার আগে গ্রহীতাকে একটি সম্মতিপত্রে সই করতে হবে।
সম্মতিপত্রে লেখা থাকবে—‘করোনার টিকা সম্পর্কে আমাকে অনলাইনে এবং সামনাসামনি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই টিকা গ্রহণের সময় অথবা পরে যে কোনো অসুস্থতা, আঘাত বা ক্ষতি হলে তার দায়ভার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী বা সরকারের নয়।’ এছাড়া ভ্যাকসিন প্রদানের সময় গ্রহীতাকে একটি টিকাদান কার্ডও দেওয়া হবে।
এদিকে টিকা নিয়ে কত দিন নিরাপদ থাকা যাবে, তা বলা যাচ্ছে না উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকেরা বলেন, ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও বলতে পারছে না টিকায় কত দিন নিরাপদ থাকা যাবে। তাই মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, করোনার ভ্যাকসিনে সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকবে। এক্ষেত্রে শতভাগ কেউ নিশ্চয়তা দিতে পারবে না। তাই যাদের শারীরিক অতিরিক্ত সমস্যা থাকে, তাদের বিলম্বে নেওয়া উচিত। আবার যারা ক্যানসার, হার্ট, কিডনিসহ অন্যান্য জটিল রোগে ভুগছেন; তাদের এই মুহূর্তে টিকা না নেওয়াই ভালো। তারা দুই থেকে তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করতে পারেন। তিনি বলেন, কাউকে জোর করে টিকা দেওয়া হবে না। স্বেচ্ছায় টিকা নিতে হবে। তিনি বলেন, নরওয়েতে টিকা নেওয়ার পর ৭০ থেকে ৮০ জন মারা গেছেন, যাদের বয়স ৮০ বছরের ওপরে। আমাদের দেশে অপারেশন করার আগে রোগীর অভিভাবকের কাছ থেকে লিখিত নেওয়া হয়। ১০০ রোগীর অপারেশনে তিন থেকে চার জন মারা যেতে পারে। সারা বিশ্বে একই নিয়ম। অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ইপিআই টিকায়ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। এখনো অনেক শিশুর টিকা নেওয়ার পর শরীরে জ্বর ও ব্যথা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, টিকা নিলে জ্বর-বমি হতে পারে। যাদের এলার্জি আছে, তাদের কিছুটা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কিছুটা কম। কারো কারো সামান্য যে কোনো ইনজেকশন দিলেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
তিনি বলেন, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার টিকা নিলে এক বছর নিরাপদ থাকা যাবে। আর ফাইজারের টিকায় দুই বছর নিরাপদ থাকার কথা তারা বলছে। বিষয়টি নিশ্চিত হতে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘নরওয়েতে করোনা টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার তদন্ত চলছে। আমাদের দেশে যখন প্রথম ইপিআইয়ের টিকা আসে, তখনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছিল। ১০ থেকে ১৫ বছর লাগে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত করতে। কিংবা তারও কম সময় লাগতে পারে। তিনি বলেন, করোনার টিকা নেওয়ার পর কত দিন নিরাপদে থাকা যাবে, এটা টিকা উৎপাদনকারীরাও বলতে পারছে না। তাই মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই উত্তম।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর বলেন, ভ্যাকসিনে সামান্য জ্বর-ব্যথা হবে—এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সবার করোনার টিকা নেওয়া উচিত। তিনি বলেন, করোনার টিকা নিলে কত দিন নিরাপদ থাকা যাবে, এটা কেউ বলতে পারে না।
এদিকে ভ্যাকসিন প্রয়োগের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অনলাইন নিবন্ধনের জন্য ২৬ জানুয়ারি থেকে ‘সুরক্ষা’ নামের একটি মোবাইল ও ওয়েব-ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন চালু করা হচ্ছে। আগামী ২৫ জানুয়ারি অ্যাপটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে হস্তান্তর করবে আইসিটি মন্ত্রণালয়। করোনা ভাইরাসের টিকা নিতে হলে এই অ্যাপে নিজেদের তথ্য দিয়ে তালিকাভুক্ত করতে হবে। সেখান থেকে সরকার টিকা গ্রহীতা সম্পর্কে যেমন সব তথ্য পাবে, তেমনি যারা টিকা নেবেন, তারাও পরবর্তী আপডেট সম্পর্কে জানতে পারবেন।