বেকার জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগাতে ফ্রিল্যান্সিং
|
৩ কার্তিক ১৪২৯ |
Tuesday, October 18, 2022
https://www.ittefaq.com.bd/616719
মো. সাইফুল মিয়া : সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এক প্রতিবেদনে আগামী বছর আমাদের দেশে বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধির পূর্বাভাস পাওয়া গেছে। তাদের তথ্য মতে, আগামী বছর বিশ্বের প্রায় সব দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমবে। সেই সঙ্গে মূল্যস্ফীতির হার আরো বাড়তে পারে। তাছাড়া উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বিশ্ব জুড়ে নীতি সুদের হার বৃদ্ধি পাবে এবং বিনিয়োগ কমবে। বিনিয়োগ কমে যাওয়া মোটেই সুখকর ব্যাপার নয়। বিনিয়োগ কমে যাওয়া মানে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সংকুচিত হওয়া।
দেশে কর্মক্ষম মানুষের তুলনায় সরকারি খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত। তাই আইএমএফ-এর পূর্বাভাসকে অবহেলা না করে সর্তক বার্তা হিসেবে নিতে হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম ২৬ লাখ ৩০ হাজার মানুষ বেকার। অন্য এক জরিপে বলা হয়েছে, দেশের প্রায় ৬৬ লাখ মানুষকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। কর্মক্ষম প্রতিটা মানুষ দেশের জন্য মূল্যবান মানবসম্পদ। এ বিশাল মানবসম্পদকে আমাদের যথাযথ কাজে লাগাতে হবে। যখন মানুষ কোনো রকম জীবনধারণের জন্য কাজের সন্ধানে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছে, তখন আইএমএফ এমন একটি প্রতিবেদন উদ্বেগের কারণও বটে।
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার বড় একটা অংশ শিক্ষিত বেকার। শিক্ষাগত যোগ্যতা বিবেচনা করলে দেখা যায়, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫ থেকে ৬ লাখ আছেন। তারা স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েও পছন্দমতো কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে না। বিপুলসংখ্যক এই কর্মক্ষম জনশক্তিকে সম্ভাবনাময় শ্রমশক্তি বলা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে উপযুক্ত কাজের অভাবে অপচয় হচ্ছে সম্ভাবনাময় জনশক্তি। বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। এ সময় একজন শিক্ষিত বেকার সহজে স্বাবলম্বী হতে পারেন ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে।
ফ্রিল্যান্সিং হলো মুক্ত পেশা। ঘরে বসেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের বা প্রতিষ্ঠানের কাজ করে অর্থোপার্জন করা যায়। কাজ করার জন্য প্রয়োজন হয় না অফিসে। প্রয়োজন শুধু ইন্টারনেট সংযোগ। কাজের নেই নির্ধারিত সময়। নিজের সময় ও সুযোগমতো কাজ করা যায়। তাই বর্তমানে সারা বিশ্বের তরুণ-তরুণীদের কাছে ফ্রিল্যান্সিং বহুলভাবে জনপ্রিয়। তাই প্রতিনিয়ত এর ক্ষেত্রও প্রসারিত হচ্ছে। বিশ্বের বড় বড় কোম্পানি এখন তাদের কাজগুলো অফিসের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ছড়িয়ে দিচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে। এতে কোম্পানিগুলো কাজের জন্য পাচ্ছে দক্ষ কর্মী এবং কর্মীরাও অন্য দেশ থেকে রেমিট্যান্স আয়ের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারছে। বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য জনপ্রিয় ওয়েবসাইট হচ্ছে আপওয়ার্ক, ফাইভার, ফ্রিল্যান্সার ডটকম, পিপল পার আওয়ার, নাইনটি নাইন ডিজাইনস, গুরু ডটকম, বিল্যান্সার ডটকম ইত্যাদি। এসব ওয়েবসাইটে গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডেটা এন্ট্রি, ডিজিটাল মার্কেটিং, কনটেন্ট রাইটিং, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, এসইও, ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি কাজ করে যে কোনো চাকরির থেকে বেশি অর্থোপার্জন করার সুযোগ রয়েছে।
বর্তমান যে জাতি প্রযুক্তির দিক দিয়ে যতবেশি দক্ষ, সে জাতি ততবেশি উন্নতি করছে। তাই আমাদের দেশের বিশাল বেকার জনগোষ্ঠীকে কম্পিউটারে দক্ষতা বৃদ্ধি করে কাজে লাগানো যেতে পারে। বর্তমানে অনন্য দেশের মতো বাংলাদেশও ফ্রিল্যান্সিংয়ের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন অনেকেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করছে। তবে আমাদের দেশে ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। প্রথমত, ডিভাইসজনিত সমস্যা। ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য যে ধরনের ডিভাইসের প্রয়োজন হয় তা অনেকের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। তাই অনেকের ইচ্ছে থাকার পরও ডিভাইসের কারণে কাজ করতে পারে না। তারপর বলতে হয়, বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সারদের সামাজিক মর্যাদা নেই। তাদের কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিও নেই।
আশার কথা হলো, বর্তমানে সরকার দক্ষ ফ্রিল্যান্সার তৈরি করতে ফ্রি কোর্সের ব্যবস্থা করেছে। সরকারি অর্থায়নে ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং’ ফ্রি কোর্স করে দক্ষ ফ্রিল্যান্সার হওয়ার পাশাপাশি কোর্স শেষে নগদ অর্থ ও সার্টিফিকেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে শিক্ষিত বেকাররা ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানে উত্সাহিত হচ্ছে। আমাদের দেশের শিক্ষিত বেকারদের ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে কাজে লাগানো সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সুনজর প্রত্যাশিত।
লেখক : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়