বাংলাদেশ কি প্রস্তুত
|
৪ কার্তিক ১৪২৯ |
Wednesday, October 19, 2022
বিশ্বকাপের আগে সম্ভাব্য সেরা প্রস্তুতির ব্যবস্থাই নিয়েছে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার গ্রীষ্মের শুরুর কন্ডিশনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলেছে। পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের মতো দুই শিরোপাপ্রত্যাশী দলের বিপক্ষে খেলে নিজেদের অবস্থাও বুঝে নিয়েছে। সিরিজের শেষ ম্যাচে ব্যাটিংয়ে ১৭০-উর্ধ্ব ইনিংসে বেশ আশার রেণুও ওড়ানো হয়েছে। টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট শ্রীধরন শ্রীরাম তো উন্নতির হিসাব কষতেই বসে গিয়েছেন।
প্রস্তুতির তবু তো আর শেষ নেই। অন্য সব দলের মতো সুপার টুয়েলভের আগে বাংলাদেশও প্রস্তুতি ম্যাচ খেলছে। গতকাল প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে ব্রিসবেনের অ্যালান বোর্ডার মাঠে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ চেনাই - আফগানিস্তান। কিন্তু ৬২ রানের অসহায় হারের পর সেই প্রস্তুতি ম্যাচই বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশ আসলেই কতটা প্রস্তুত সে প্রশ্ন জাগিয়ে তুলেছে।
ওপেনিং
উদ্বোধনী জুটি বাংলাদেশের জন্য বরাবরই চিন্তার জায়গা। তবে গত এক বছরের মতো এতটা মাথাব্যথা আর কখনো সম্ভবত ছিল না। গত দুই মাসে তাই এই পজিশন নিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। বিশ্বকাপের আগে দুই প্রস্তুতি ম্যাচে আর কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে মূল জুটিকেই দেখা যাবে বলে ধারণা দিয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। সে আশার গুড়ে বালি।
লিটন দাসকে ওপেনিংয়ে ফেরানোর কথা, সেই লিটনই হালকা চোট পেয়ে মাঠের বাইরে। তাই তার বিকল্প হিসেবে আবার ‘মেইক শিফট’ তত্ত্বে ফেরা, ওপেনিংয়ে আবার মিরাজ। তার সঙ্গী হিসেবে সৌম্য সরকার নয়, নেমেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত! বিশ্বকাপে দলের ওপেনিং জুটির ব্যাপারে ধারণা দিয়ে গেল কি সেটি?
তাতে ইতিবাচক কিছুর ইঙ্গিত অবশ্য ছিল না। ফজল হক ফারুকির বলে স্টাম্প হারানোর আগে শান্ত ৯ বলে ১২ রান করেছেন। মিরাজ অন্য পেসার নাভিনের বলে বোল্ড হওয়ার আগে অবশ্য ৩১ বল টিকতে পেরেছেন বটে, তবে তাতে তার ব্যাটে মাত্র ১৬ রান অস্ট্রেলিয়ান কন্ডিশনে ‘মেইক শিফট’ ওপেনার নামানোর সিদ্ধান্তকে হাস্যকর বানিয়ে তুলেছে।
ব্যাটিং লাইনআপ
ত্রিদেশীয় সিরিজে লিটন দাস তিন ও সাকিব আল হাসান চারে নেমেছেন। আফিফ হোসেন নেমেছেন পাঁচে। গতকালও সাকিব ও আফিফের নিজেদের অবস্থান ধরে রাখা অবশেষে ব্যাটিং লাইনআপ সম্পর্কে ইঙ্গিত দিচ্ছে। লিটনের অনুপস্থিতিতে কাল তিনে দেখা গেছে সৌম্যকে।
আরও একবার মুজিব-উর-রহমানের বলে সৌম্যর অসহায়ত্ব প্রকাশ পেয়েছে। আর বাঁহাতি পেসের সামনে বাংলাদেশ দলের মিডল অর্ডার ও লোয়ার মিডল অর্ডারে ধস নেমেছে। বাঁহাতি পেসের সামনে এমন অসহায়ত্ব বাংলাদেশের নতুন নয়। ফারুকি এর আগেও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতা দেখিয়ে দিয়েছেন। গত দুই বছরে মিচেল স্টার্ক, ট্রেন্ট বোল্ট, শাহিন আফ্রিদি এমনকি ওমান বা পাপুয়া নিউগিনির বাঁহাতি পেসাররাও বাংলাদেশকে ভুগিয়েছেন।
স্লগ ওভার বোলিং
গতকাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের শুরুটা খারাপ হয়নি। হাসান মাহমুদ, তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমানরা আফগানিস্তানকে চাপে রেখেছিলেন। কিন্তু স্লগ ওভারে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে বাংলাদেশ। শেষ ৩ ওভারে ৪২ রান দিয়েছেন সাকিবরা। ত্রিদেশীয় সিরিজেও শেষ দিকে রান আটকানোয় দক্ষতার অভাব টের পাওয়া গেছে বাংলাদেশের।
লেগ স্পিন দুর্বলতা
বাংলাদেশ যে লেগ স্পিনে দুর্বল, সেটা গোপন কিছু নয়। গত দুই বছরে স্পিনে বাংলাদেশ যখন ভুগেছে, অন্য প্রান্তে একজন লেগ স্পিনার ছিলেন। ওদিকে বহু দিন ধরেই একজন প্রকৃত লেগ স্পিনার ছাড়া খেলছে বাংলাদেশ। এটা ভালোভাবে টের পাওয়া যায় যেকোনো সিরিজে। অ্যাডাম জাম্পা, ইশ সোধি, রশিদ খান তো বটেই, এমনকি উইন্ডিজের হেইডেন ওয়ালশ বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মায়াপ্পানও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ভোগান।
গতকাল আবারও স্পষ্ট হয়েছে সেটা। বাংলাদেশের ব্যাটিং ধস দেখে রশিদ খান আর বোলিং করেননি। কিন্তু তার অনুপস্থিতিতেও স্বস্তি মেলেনি বাংলাদেশের। কায়েস আহমেদের লেগ স্পিনে রীতিমতো টেস্ট খেলেছে দল। ৩ ওভারে মাত্র ৪ রান দিয়েছেন আফগানিস্তানের দ্বিতীয় পছন্দের লেগ স্পিনার।