পোশাক শিল্পে আশা জাগানিয়া খবর : রপ্তানি বেড়েছে ৪৩ শতাংশ
|
৫ কার্তিক ১৪২৯ |
Thursday, October 20, 2022
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি যখন টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প আশা জাগানিয়া খবর দিচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম (জানুয়ারি-জুলাই) সাত মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৪৩ শতাংশ। যেখানে সারা বিশ্ব থেকে ইইউর আমদানি বেড়েছে ২৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ। বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধিতে সবার শীর্ষে রয়েছে। ইউরোপীয় পরিসংখ্যান সংস্থা ‘ইউরোস্ট্যাট ইইউ’র আমদানির প্রকাশিত পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, ২০২২ সালের প্রথম সাত মাসে ইইউর দেশগুলোতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি হয়েছে এক হাজার ৩১৬ কোটি বা ১৩ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি বেড়েছে ৪৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ। গত বছরের প্রথম সাত মাসে ইইউতে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানি করেছিল ৯৭৬ কোটি বা ৯ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার।
ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১ সালের জুলাইয়ের তুলনায় ২০২২ সালের এই সময় পর্যন্ত বিশ্ব থেকে ইইউর আমদানি প্রবৃদ্ধি ২২ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে চীন থেকে গত সাত মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোশাক আমদানি ২৩ দশমিক ৫২ শতাংশ প্রবৃদ্ধিসহ ১৪ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। এর পরের অবস্থানেই রয়েছে তুরস্ক। চলতি এ সময়ে দেশটি ইইউতে রপ্তানি করেছে ৭০৮ কোটি বা ৭ বিলিয়ন ডলার। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের পরেই অবস্থান করছে দেশটি। এ পরিমাণ রপ্তানির মাধ্যমে এ সময়ে দেশটির প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ।
তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ইইউতে ৩১৭ কোটি ডলার পোশাক রপ্তানি করেছে ভারত। এর মাধ্যমে চলতি এ সময়ে দেশটির প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ২৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
ইইউতে এ সময়ে ভিয়েতনামের রপ্তানি কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে (জানুয়ারি-জুলাই) দেশটি রপ্তানি করেছে ২৩০ কোটি ডলার। এ সময়ে দেশটির প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
এরপর উল্লেখযোগ্য অন্যান্য প্রবৃদ্ধির দেশগুলো হচ্ছে কম্বোডিয়া ৪১ দশমিক ৫০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ৩০ দশমিক ৮৬ শতাংশ, পাকিস্তান ২৮ শতাংশ, মরক্কো ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কা ১৪ শতাংশ।
তৈরি পোশাক মালিক ও রপ্তানিকারক সমিতি বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ইইউর আমদানিতে একটি লক্ষণীয় প্রবৃদ্ধির ধারা রয়েছে। তবে বছরের শেষে গিয়ে বিশ্ব থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পোশাক আমদানি কমতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে, খুচরা বিক্রেতারা ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির বিশ্ববাজারের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সংগ্রাম করছে। অনেক ইউরোপীয় ব্র্যান্ডের খুচরা বিক্রি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে, যা তাদের ইনেভেন্টরি স্টক বাড়িয়েছে।’
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রাজধানীর পার্শ্ববর্তী এলাকা সাভারে ‘রানা প্লাজা’ ভবন ধসে কমপক্ষে ১১শর বেশি তৈরি পোশাকশ্রমিকের মৃত্যু হয়। আহত হয় আরও কয়েক হাজার। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার পর দেশ-বিদেশে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। ঘটনার পর থেকে তৈরি পোশাক খাতে ব্যাপক সংস্কার হয়েছে। ফলে দেশের কারখানার বিষয়ে ক্রেতাদের আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে। কারখানাগুলোতে এখন কমপ্লায়েন্স বা নিয়মতান্ত্রিক উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে। যে জন্য বিদেশিরা তৈরি পোশাক খাতের বিষয়ে এখন ‘ফলো বাংলাদেশ’ (অনুসরণ বা অনুকরণ) বলছেন বলে দাবি করছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা। তবে ওই ঘটনার পর কারখানার কর্মপরিবেশ ও ভবন বিষয়ে প্রথম দিকে যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, তার সুফল বর্তমানে পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।