ব্রাজিলের জাদুকরী খেলা দেখে অনেকে আর্জেন্টিনা ছাড়ছেন
|
১১ অগ্রহায়ন ১৪২৯ |
Friday, November 25, 2022
আশিক রহমান :বিশ্বকাপে ১ নম্বর র্যাংকিংয়ে থাকা ব্রাজিল সার্বিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়েছে । নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ব্রাজিল সুন্দরঅত্যন্ত দুর্বল দল সৌদি আরবের সাথে হেরে যাওয়ায় সে সঙ্গে ব্রাজিলের জাদুকরী খেলা দেখে অনেক আর্জেন্টিনা সমর্থক রাগে ক্ষেভে দল ছাড়ছেন। অনেকে আবার ব্রাজিলে ভিড়তে শুরু করেছেন। আরজেন্টিনা সমর্থক এশিয়ান টিলিভিশনের শহিদুল্লা গাজী ব্রোজিল সমর্থকদের বলেন- “এমন খেলা দেখে আমি মুগ্ধ। আমি আপনাদের (ব্রাজিলের) সাথেই আছি”। যাত্রাবাড়ি এলাকার রুবেল ভুইয়া বলেন- “জীবনে বেঁচে থাকতেআর কখনোআরজিতিনা (আরর্জেন্টেনা) করবো না। ব্রাজিল ফুটবলের রাজা, রাজাদের সাথেই থাকতে চাই। ব্রাজিলের জয়ের পর ব্রাজিল সমর্ধক এনটিভির সিনিয়র নিউজ রুম এডিটর শাকিল আহম্মেদ বলেন- ‘ব্রাজিলে যারা খেলছেন তারা সবাই নেইমার। পাগল করা ছন্দের খেলা খেলছেন সবাই ‘। ব্রাজিল ইতিহাস গড়ার শীর্ষে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে ৮৮বছরে কখনোই বিশ্বকাপের প্রথম মেচে হারেনি বিশ্বের সেরা ব্রান্ডদল ব্রাজিল। এবারও দুরদান্ত খেলে তাদের মরর্যাদাি অক্ষুন্ন রাখলো।
শুক্রবার রাতে ব্রাজিল ফুটবলের জয়গান গাইলো গলা ছেড়ে। ব্রাজিল আক্রমণের সুনামি বইয়ে দিল। তাতেই উড়ে গেল সার্বিয়ার ডিফেন্স। গোটা ম্যাচে ব্রাজিল যে আক্রমনাত্মক ফুটবল খেললো, নিশ্চিতভাবে তা দেখে এখন যে কোন প্রতিপক্ষের বুকে কাঁপুনি শুরু হবে। ম্যাচের স্কোরলাইন ২-০। এটা ৪-০ ও হতে পারতো। সার্বিয়ার গোলপোষ্টে লেগে ফিরে আসে ব্রাজিলের নিশ্চিত দুটি গোল। ম্যাচের ব্রাজিল যেন গোলোৎসব করে। বক্সে বেশ কয়েকজন সার্বিয়ান ডিফেন্ডারদের বোকা বানান। তার কাছ থেকে বল যায় ভিনিসিয়াসের কাছে। বক্সের বাম পাশ থেকে ভিনিসিয়াস জোরে শট নেন। কিন্তু সেই শট রক্ষা হয়। ফিরতি বলে আর রক্ষা হলো না সার্বিয়ার। রিচার্লিসন ঠিক বল জালে পাঠালেন। এগিয়ে যাওয়ার পর ব্রাজিলকে যেন আক্রমণের নেশায় পেয়ে বসে। ১১ মিনিট পরে রিচার্লিসন বাইসাইকেল কিকে যে গোল করলেন নিঃসন্দেহে সেটা এখন পর্যন্ত এই বিশ্বকাপের সেরা গোল! ভিনিসিয়াসের ক্রসে পেনাল্টি বক্সে বল পেয়ে যান রিচার্লিসন। কিন্তু অফ ব্যালেন্সে থাকায় শট নেওয়ার মতো পজিশনে ছিলেন না তিনি। তাৎক্ষণিক বুদ্ধিতে এক টাচে বলকে উপরের দিকে তোলেন। মুহূর্তেই শূন্যে পুরো শরীর ভাসিয়ে বাইসাইকেল কিকে শট নেন। গোলকিপার বাম দিকে ঝাঁপ দেন। কিন্তু বল জালে। মাঠের ১১ ব্রাজিলিয়ানদের সঙ্গে আনন্দ-উচ্ছাসে ভেসে উঠে পুরো গ্যালারি। কোন সন্দেহ নেই সামনের দিনগুলোতে রিচার্লিসনের নিপুন ভঙ্গিতে করা এই গোল ফুটবল আলোচনার অন্যতম বিষয় হবে।
বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ব্রাজিল সুন্দর ফুটবলের জয়গান গাইলো গলা ছেড়ে। প্রথমার্ধেও ব্রাজিল আক্রমণ শানালো দাপট নিয়েই। কিন্তু গোলের সামনে এসেই খেই হারিয়ে বসে। গোলের পরিকল্পনা হলো। কিন্তু কার্যকর হলো কই? দুই উইং থেকে বল নিয়ে সার্বিয়ার ডিফেন্সে এলো ব্রাজিল। আড়াআড়ি ক্রসও হলো বেশ। কিন্তু গোলের শেষধাপ পার হওয়া যে হলো না! ম্যাচের প্রথম ৪৫ মিনিটে স্কোরলাইন রইল ০-০। অথচ সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে বিরতিতে যেতে পারতো ব্রাজিল ৩-০’র স্কোরলাইন নিয়ে। গোলের সুযোগ পেল ঠিকই ব্রাজিল। কিন্তু সুযোগ নষ্ট করলোও যে তারা আরও বেশি! ম্যাচের সবচেয়ে সহজ সুযোগ পেয়েছিলেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র ২৮ মিনিটে। থিয়াগো সিলভার দুর্দান্ত পাস বাড়ান বক্সে। ভিনিসিয়াস জুনিয়র পায়ে বল পেয়ে যান। কিন্তু সার্বিয়ার গোলরক্ষক ভ্যানজা মিলিনকোভিচ স্যাভিচ দৌঁড়ে এসে ব্লক করে বল ক্লিয়ার করেন। দুর্দান্ত কিপিং!
৩৪ মিনিটের সময় রাফিনহা যে গোল মিস করেন তার রিপ্লে দেখলে কপাল চাপড়াবেন। পাকুয়েতার পাসে বক্সে ফাঁকায় বল পান রাফিনহা। সামনে তার শুধু গোলকিপার। পেনাল্টি বক্সের সামনে থেকে রাফিনহা পোস্টে শট নিতে গিয়ে যা করলেন তাকে শট নেওয়া বলে না, মনে হলো সামনে দাঁড়ানো সার্বিয়ার গোলকিপারকে তিনি পাস দিলেন!
যাকে বলে গোলের সুবর্ণ সুযোগ, তেমনই আরেকটা সুযোগ নষ্ট করলেন রাফিনহা বিরতির পরপরই। সার্বিয়ার ডিফেন্সের ভুলে বক্সে বল পেয়ে যান রাফিনহা। কিন্তু সামনে এগিয়ে আসা গোলকিপারের শরীরে বল মারেন তিনি। অথচ খানিকটা উপরের দিকে লব করলেই গোল।
৫৯ মিনিটের সময় মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে তেড়েফুঁড়ে সামনে বাড়েন আলেক সান্দ্রো। গোলকিপারের দিকে একবার তাকিয়ে নিশানা ঠিক করেন। বাম পায়ে প্রচন্ড গতিতে শট নেন। সার্বিয়ার গোলকিপার পরাস্ত হন। কিন্তু বল সাইডপোস্টে লেগে ফিরে এলো। সার্বিয়া বারকয়েক পাল্টা আক্রমণে উঠে ব্রাজিলের ডিফেন্সের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেয়। তবে গোল করার মতো ফিনিসারের বড় অভাব ছিল সার্বিয়ার।
শুরুর অর্ধে গোল মিসের দুঃখে পুড়ছিলো ব্রাজিল। দ্বিতীয়ার্ধে দুর্দান্ত দলীয় পারফরমেন্স দেখিয়ে ব্রাজিল ঠিকই জানিয়ে দিল- হেক্সা জিততেই এসেছে তারা।