ভুমিকম্প দুয়ারে : বাংলাদেশ কি প্রস্তুত?
|
২৩ বৈশাখ ১৪৩০ |
Saturday, May 6, 2023
মীর আব্দুল আলীম: ৫ মে ভোরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় রখটার স্কেলে ৪.৩ মাত্রার ভূকম্পন অনুভূত হয়। এর ঠিক ১০ দিন আগে রাজধানীর সন্নিকটে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার এলাকায় রিখটার স্কেলে ৩.৯ মাত্রার আরেকটি ভূকম্পন হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস এর হিসেব অনুযায়ী ৫ মে’র ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার কাছে বিক্রমপুরের দোহারে। ভূতত্ববিদরা বলছেন, ভূমিকম্প ভূ-পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে হওয়ায় এ নিয়ে চিন্তিত তাঁরা। দেশে ঘটে যাওয়া পরপর দু’ট ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ঢাকা শহরের নিকটে এবং ভূপৃষ্ঠের খুব কাছাকাছি হওয়ায় শংকা তৈরি করে বৈকি!
ভূতত্ববিদরা দীর্ঘদিন ধরেই দেশে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আশঙ্কা করছেন। এর লক্ষণ হিসাবে প্রায়ই দেশের কোথাও না কোথাও মৃদু ও মাঝারি মাত্রায় ভূমিকম্প হচ্ছে। বাংলাদেমে ঘনঘন ভুমিকম্প এবং নিকটবর্তী হওয়ায় সবার মনে শঙ্কা তৈরি করেছে। এ অবস্থায়, ভূমিকম্প মোকাবিলায় বাংলাদেশ কি প্রস্তুত? এ প্রশ্ন সামনে আসে। ১০ বছর আগে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের পর আমাদের সক্ষমতা কতটুকু তা আমরা টের পেয়েছি। এর পর ভূমিকম্প মোকাবিলায় সক্ষমতা কিন্তু তেমন বাড়েনি। তাহলে বড় ধরনের ভুমিকম্প হলে কি হবে? তুরস্ক,নেপাল, চীন ও ভারতে যে মাত্রার ভূমিকম্প হয় সেমাত্রায় বাংলাদেশে ভূমিকম্প হলে রাজধানী ঢাকার ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ভবন ধসে বা হেলে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রাণ হরাবে হাজার হাজার মানুষ। সেক্ষেত্রে সারা দেশে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কত ভয়াবহ হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।
ভূকম্পন পর্যবেক্ষন কেন্দ্র বলছে, এর আগে ঢাকার এত কাছে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়নি। ২৫ এপ্রিল: নারায়ণগঞ্জের আড়াইজোরে ৩ দশমিক ৯, আর ৫ মে দোহারে রখটার স্কেলে ৪.৩ মাত্রার এবং ২০০৮ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে কুমিল্লায় ৪.২ থেকে ৪.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। ভুমিকম্প নিয়ে আগাম কিছুই বলা যায় না, তবে আশা কথা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মাকসুদ কামাল এক স্বাক্ষাতকারে বলেছেন, শেষের ভূমিকম্পটির সৃষ্টি হয়েছে ছোট ফাটল রেখায়। সে কারণেই ঢাকায় বড় কোনো বিপদের শঙ্কা নেই। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে ভূমিকম্পের রিটার্ন পিরিয়ড ধরা হয় ১৫০-২৫০ বছর। সে হিসাবে ১৭৬২ সালে আরাকান ও হমেদ আনসারী চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৮ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল বলে জানা যায়, সাইকেল হিসেবে সেটি এখনো ফিরে আসেনি। আসতে পারে। আসলে একটু ভয়তো থাকেই।
ভূমিকম্পে এভাবে প্রায়ই কাঁপছে বাড়িঘর। ভুমিকম্পের উৎপত্তিস্থল এবং গভিরতা একেবারেই নিকেটে চলে এেেসছে। সবার ভয়, এই বুঝি ঘরটা ভেঙে পড়ছে মাথার ওপর। এ ভয় এখন সবাইকে পেয়ে বসেছে। তবে ভূমিকম্পকে ভয় পেলে চলবে না। ভয়কে জয় করতে হবে। ভূমিকম্প থেকে বাঁচার উপায় বের করতে হবে। ভূমিকম্পে উঁচুতলার বিল্ডিংগুলো আগে ভেঙে পড়বেÑ এ কথা ঠিক নয়। বরং ভূমিকম্পে হাই রাইজ বিল্ডিংয়ের চেয়ে দুর্বল ছোট বিল্ডিংগুলোই ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি। ৬ তলার নিচের বিল্ডিংগুলো বেশি অনিরাপদ। ভূমিকম্পে বিল্ডিং সাধারণত দুমড়েমুচড়ে গায়ে পড়ে না; হেলে পড়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। এ সময় নিজেকে রক্ষা করতে হবে। ভিম কিংবা কলামের পাশে শক্ত কোনোকিছু থাকতে হবে। বিশেষ করে খাট কিংবা শক্ত ডাইনিং টেবিল হলে ভালো হয়। আগে থেকেই আশ্রয়ের জায়গা ঠিক করে নিতে হবে। ঘরে রাখতে হবে শাবল এবং হাতুড়ি জাতীয় কিছু দেশীয় যন্ত্র। ভূমিকম্প হলে অনেকেই তড়িঘড়ি করে নিচে ছোটেন। তারা জানেন না, ভূমিকম্পে যত ক্ষতি হয়, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয় অস্থির লোকদের ক্ষেত্রে।
ভূমিকম্প খুব অল্প সময়ের মধ্যে শেষ হয়। প্রলয় যা হওয়ার, তা হয় কয়েক সেকেন্ড কিংবা মিনিট সময়ের মধ্যে। এই সময়ে আপনি কি নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারবেন? রাস্তায় গিয়ে তো আরো বিপদে পড়তে হবে আপনাকে। বাড়িঘর হেলে গিয়ে ধসে পড়ে সবকিছু তো রাস্তার ওপরই পড়বে। বরং রাস্তায় থাকলে চাপা পড়ে, মাথা কিংবা শরীরের ওপরে কিছু পড়ে আপনি হতাহত হতে পারেন। যারা একতলা কিংবা দোতলায় থাকেন, পাশে খালি মাঠ থাকলে দ্রুত দৌড়ে যেতে পারেন। সেখানে যেতে যদি জঞ্জাল থাকে, তাহলে সৃষ্টিকর্তাকে ভরসা করে শক্ত কোথাও অবস্থান নেয়াই শ্রেয়। রাজধানী ঢাকায় যারা বসবাস করেন, যারা উঁচু বিল্ডিয়ে থাকেন, তাদের ভয়টা যেন একটু বেশি। তাদের জ্ঞাতার্থে বলছি, আমাদের দেশে ৬ তলার ওপরে নির্মিত বিল্ডিংগুলো সাধারণত নিয়ম মেনেই হয়। বড় বিল্ডিং তৈরির ক্ষেত্রে অনেকেই ঝুঁকি নিতে চান না। একটু দেখভাল করেই নির্মাণকাজ করে থাকেন। আর এসব বিল্ডিং পাইলিং হয় অনেক নিচু থেকে এবং বেইজ ঢালাই দেয়া হয় পুরো বিল্ডিংয়ের নিচজুড়ে। তাই শুধু কলামে দাঁড়িয়ে থাকা বিল্ডিংয়ের চেয়ে হাই রাইজ বিল্ডিং কিছুটা হলেও নিরাপদ বলা যায়। ভূমিকম্পকে ভয় পেলে চলবে না, এ ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে সবাইকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কেবল ভূমিকম্পই নয়, দেশের উপকূলীয় এলাকা ঘিরে ভয়াবহ সুনামি সৃষ্টির জন্য সাইজমিক গ্যাপ বিরাজমান রয়েছে। এই গ্যাপ থেকে যেকোনো সময় সুনামিও হতে পারে। তাদের মতে, বঙ্গোপসাগরের উত্তরে আন্দামান থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সাবডাকশন জোন বরাবর ৬০০ কিলোমিটারের একটি সাইজমিক গ্যাপ রয়েছে। আমাদের দেশে শক্তিশালী ভূমিকম্প হওয়ার জন্য যথেষ্ট শক্তি এই সাইজমিক গ্যাপে জমা হয়ে আছে। এই সাইজমিক গ্যাপ আমাদের জন্য অশনিসংকেত। এখান থেকে ৮ মাত্রার মতো শক্তিশালী ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর তা যদি সাগরতলে হয়, তাহলে সেই ভূমিকম্প সুনামি সৃষ্টি করতে পারে। বাংলাদেশে শক্তিশালী ভূমিকম্প এবং সুনামিরই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশে কমে যাবে।
প্রথমত যা করতে হবে : পরিবারের সবার সঙ্গে বসে ভূমিকম্পের সময় কী করতে হবে, কোথায় আশ্রয় নিতে হবে, মোটকথা আপনার পরিবারের ইমার্জেন্সি প্ল্যান কী, তা ঠিক করে সব সদস্যকে জানিয়ে রাখুন। নিচের ১০টি টিপস পারলে ফটোকপি করে পরিবারের সব সদস্যকে দিন। বিষয়গুলো নিয়ে একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করুন। সম্ভব হলে অন্যদেরও তা সরবরাহ করুন। বিষয়গুলো জানা থাকলে ভূমিকম্পের সময় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হতে পারে।
* ভূমিকম্পের সময় সবচেয়ে উত্তম পন্থা হলো ‘ড্রপ-কাভার- হোল্ড অন’ বা ‘ডাক-কাভার’ পদ্ধতি। অর্থাৎ, কম্পন শুরু হলে মেঝেতে বসে পড়ুন। তারপর কোনো শক্ত টেবিল বা ডেস্কের নিচে ঢুকে কাভার নিন। এমন ডেস্ক বেছে নিন বা এমনভাবে কাভার নিন, যেন প্রয়োজনে আপনি কাভারসহ মুভ করতে পারেন। তাদের মতে, ভূমিকম্পে আমেরিকার খুব কম বিল্ডিংই কলাপস করে। যেটা হয়, তা হলো, আশপাশের বিভিন্ন জিনিস বা ফার্নিচার গায়ের ওপর পড়ে নেক-হেড-চেস্ট ইনজুরি বেশি হয়। তাই এগুলো থেকে রক্ষার জন্য কোনো শক্ত ডেস্ক বা এ রকম কিছুর নিচে ঢুকে কাভার নেয়া বেশি জরুরি।
* ভূমিকম্পের সময় কোন ফ্লোর নিরাপদ, কিভাবে দালান ভেঙে পড়ে- কাত হয়ে, নাকি এক তলার ওপরে আরেকটাÑ অনেকে এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে চান। এটা ওই জায়গার মাটির গঠন, বিল্ডিং কিভাবে তৈরি, এর ওপরই অনেকাংশে নির্ভর করে। সাধারণত ভূমিকম্পের সময় চারভাবে ফ্লোর বা দালান ধসে পড়তে পারে। দালানের কোন তলা বেশি নিরাপদÑ এ ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মতামত যেটা পেয়েছি, তা হলো, ভূমিকম্পের সময় ওপরের দিকের তলাগুলোতে দুলুনি হবে বেশি, নিচের তলায় কম। কিন্তু দালান যদি উলম্ব বরাবর নিচের দিকে ধসে পড়ে, তাহলে নিচতলায় হতাহত হবে বেশি। কারণ, ওপরের সব ফ্লোরের ওজন তখন নিচে এসে পড়বে।
* যে ফ্লোরেই থাকুন, ভূমিকম্পের সময় বেশি নড়াচড়া, বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করা, জানালা দিয়ে লাফ দেয়ার চেষ্টা ইত্যাদি না করাই উত্তম। একটা সাধারণ নিয়ম হলো, এই সময়ে যত বেশি মুভমেন্ট করবেন, তত বেশি আহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। তবে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে অব দ্য রেকর্ড একটা কথাÑ যদি গ্রাউন্ড ফ্লোরে একেবারে দরজার কাছে থাকেন, তাহলে এক দৌড়ে বাইরে কোনো খোলা জায়গায় চলে যান। সিঁড়ি পার হয়ে যেতে হলে না যাওয়াই ভালো।
* সিঁড়িতে আশ্রয় নেয়া উচিত নয়। এছাড়া ভূমিকম্পের সময় এলিভেটর/লিফট ব্যবহার করাও উচিত নয়।
* রাতে বিছানায় থাকার সময় ভূমিকম্প হলে উদ্ধারকর্মী বলছে, গড়িয়ে ফ্লোরে নেমে পড়তে। এটা বিল্ডিং ধসার পার্সপেক্টিভেই। রেডক্রস বলছে, বিছানায় থেকে বালিশ দিয়ে কাভার নিতে। কারণ, সিলিং ধসবে না, কিন্তু ফ্লোরে নামলে অন্যান্য কম্পনরত বস্তু থেকে আঘাত আসতে পারে।
* ভূমিকম্পের সময় ভেতরের দিকে না থেকে বাইরের দিকে ওয়ালের কাছে আশ্রয় নেয়া উচিতÑ এটা নিয়ে কোনো বিরোধ পাইনি। যেটা পেয়েছি, তা হলো, কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এবং এর উল্টো হাইপোথিসিসও নাকি আছে যে, ভেতরের দিকে থাকাই ভালো। ভূমিকম্পের সময় বাইরের ওয়ালের কাছে আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ মূলত বিল্ডিং ধসে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বলা। ভূমিকম্পে যদি দালান ধসে পড়ে, তাহলে বাইরের দিকের ওয়ালের কাছে থাকলে ধংসস্তূপ থেকে তাড়াতাড়ি উদ্ধার পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অন্যদিকে হচ্ছে, এই সময়ে ভেতরের দিকে আশ্রয় নেয়া অর্থাৎ জানালা, কাচ, বাইরের ওয়াল, দরজাÑ সবকিছু থেকে দূরে থাকা। আপনি যদি নতুন, মজবুত কোনো দালানে থাকেন, তাহলে ঋঊগঅ-পরামর্শ অনুযায়ী ভেতরের দিকেই থাকেনÑ জানালা, কাচ, বাইরের ওয়াল সবকিছু থেকে দূরে। আর যদি পুরান ঢাকার বাড়িগুলোর মতো ঝরঝরে কোনো দালানে থাকেন, তাহলে বাইরের ওয়ালের কাছে আশ্রয় নিন, দালান ধসে পড়লে যেন কম জিনিসের মধ্যে চাপা পড়েন।
* ভূমিকম্পের সময় গাড়ি বন্ধ করে গাড়ি থেকে বেরিয়ে বসে বা শুয়ে পড়তে হবে। অবশ্য রেডক্রস বলছে গাড়ি বন্ধ করে গাড়ির ভেতরেই বসে থাকতে। গাড়ির বাইরে থাকলে আহত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। রেডক্রসের এই পরামর্শ যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তিতে দেয়া; এবং এটা সব দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হতে পারে।
* সব বড় ভূমিকম্পের পরপরই আরেকটি ছোট ভূমিকম্প হয়, যেটাকে ‘আফটার শক’ বলে। এটার জন্যও সতর্ক থাকুন। তা না হলে পচা শামুকেই শেষমেশ পা কাটতে পারে।
* বড় বড় এবং লম্বা ফার্নিচারগুলোকে, যেমনÑ শেলফ ইত্যাদি দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখুন, যেন কম্পনের সময় গায়ের ওপর পড়ে না যায়। আর টিভি, ক্যাসেট প্লেয়ার ইত্যাদি ভারী জিনিসগুলো মাটিতে নামিয়ে রাখুন।
* প্রথম ভূমিকম্পের পর ইউটিলিটি লাইনগুলো (গ্যাস, বিদ্যুৎ ইত্যাদি) একনজর দেখে নিন। কোথাও কোনো লিক বা ড্যামেজ দেখলে মেইন সুইচ বন্ধ করে দিন।
ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলার ক্ষেত্রে আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত দুইটিÑ প্রথমত, ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাকে নিম্নতম পর্যায়ে রাখা; এবং দ্বিতীয়ত, ভূমিকম্প-পরবর্তী বিপর্যয় সামাল দেয়া। দীর্ঘদিন যাবৎ ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকির কথা বলা হলেও উভয় ক্ষেত্রেই আমাদের অবস্থা এখনো খুবই শোচনীয়। ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা নিম্নতম পর্যায়ে রাখতে হলে বাড়িঘর ও হাসপাতালসহ সরকারি-বেসরকারি ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড কঠোরভাবে মেনে চলা উচিত। অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আর বিলম্ব করা সমীচীন হবে না। ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের প্রকৃত সময় এখনই। আর কালক্ষেপণ না করে এ ব্যাপারে বর্তমান সরকারের জরুরি পদক্ষেপ নেয়া উচিত। আর আমাদের ভূমিকম্পে ভয় পাওয়া ঠিক নয়। ভূমিকম্প আচানকই হয়। কোথায় কী হবে, কেউ আগেভাগে বলতে পারে না। ভূমিকম্পে কাঁপছে বাড়িঘর, এই বুঝি ভেঙে পড়ছে মাথার ওপরÑ এমন ভয় যেন আমাদের মানসিক রোগী বানিয়ে না ফেলে। জন্মের পর থেকেই দেখছি আর শুনে আসছি, শক্তিশালী ভূমিকম্পে বাংলাদেশের বড় অংশ ধ্বংস হয়ে যাবে। ৪৬ বছর পার করে দিলাম, ভূমিকম্পে এ যাবৎ আমার কিংবা আমার পরিবারের একটি টাকারও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এমনকি কারো প্রাণহানিও ঘটেনি। ভূমিকম্পকে ভয় পেলে চলবে না। ভয়কে জয় করতে হবে। ভূমিকম্প থেকে বাঁচার উপায় বের করতে হবে।
লেখক- সাংবাদিক, কলামিস্ট, সমাজ গবেষক, চেয়ারম্যান, আল-রাফি হাসপাতাল লি:।