ওষুধের ঊর্ধ্বমুখী মূল্যেও দিশেহারা সাধারণ মানুষ
|
১৪ চৈত্র ১৪৩০ |
Thursday, March 28, 2024
তেল, চিনি, আলু, পেঁয়াজসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী মূল্যে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। এরই মধ্যে আবারও অস্থিরতা শুরু হয়েছে জরুরি ওষুধের বাজারেও। করোনা মহামারির সময় সেই যে বেড়েছিল ওষুধের দাম, তা আর কমেনি। গত বছর ডেঙ্গুর ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের সময় বেড়েছিল নাপা, ফেক্সো-ফেনাডিন, ডক্সিভা, সেকলো, অমিডন, মন্টিয়ার-মোনাস, এমকাস, রিভার্সএয়ারের মতো বহুল ব্যবহৃত ওষুধের দাম।চলতি বছরের শুরু থেকে আবারও ওষুধের বাজারে তৈরি হয়েছে অস্থিরতা। ২০ টাকার নাপা সিরাপ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকায়। ৪৫ টাকার সেকলোর পাতা কিনতে দিতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধের দাম। সেফথ্রি বা সেফিক্সিম জাতীয় ওষুধ পিস প্রতি বেড়েছে ১০ টাকা করে। এমন পরিস্থিতিতে অন্যান্য খরচ কাটছাঁট করে চিকিৎসা খরচ চালাতে হচ্ছে মানুষকে। তবে ব্যবসায়ীরা ওষুধের দাম বৃদ্ধির জন্য গত বছরের মতো এ বছরও ডলারের দাম বৃদ্ধিকেই দায়ী করছেন।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রস্রাবজনিত সমস্যায় ব্যবহৃত স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ইউকল ২ এমজি ট্যাবলেট ৩ থেকে ৫ টাকা করা হয়েছে। ফলে এক বক্সের (৬০টি) দাম ১৮০ থেকে বেড়ে ৩০০ টাকা হয়েছে। দাম বেড়েছে ৬৭ শতাংশ। নিউমোনিয়া ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ এবং টনসিলাইটিসের জন্য ব্যবহৃত একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের ৫০০ এমজির অ্যাজিন ক্যাপসুল প্রতি পিস ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা করা হয়েছে।
এক পাতার ৬টির দাম ২৭০ থেকে বেড়ে ৩৩০ টাকা হয়েছে। বেড়েছে ২২ শতাংশ। গত বছর মোট ১ হাজার ৬৫০টি জেনেরিক ওষুধের মধ্যে সরকার নিয়ন্ত্রিত ওষুধ ১১৭ টা। এর মধ্যে ৫৩টি ওষুধের দাম বাড়ায় সরকার। সেই দাম বাড়ানোর প্রভাবে জরুরি ওষুধের দাম যে একবার বৃদ্ধি পেয়েছিল, তার আর কমেনি। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, প্রায় সব ওষুধেরই দাম বেড়েছে।
সরেজমিনে রাজধানীর কয়েকটি এলাকার ওষুধের ফার্মেসিগুলো ঘুরে দেখা যায়, ইকোস্প্রিন ছিল ৬ টাকা, হয়েছে ১৫ টাকা। ট্যাবলেট প্রতি দাম ৬০ পয়সা থাকলেও তা বাড়িয়ে এখন ৮০ পয়সা করা হয়েছে। সেই হিসেবে ৮ টাকা পাতা হওয়ার কথা থাকলেও বিক্রেতারা তা রোগীদের কাছে বিক্রি করছেন ১৫ টাকায়। পাতা প্রতি বেশি রাখা হচ্ছে ৭ টাকা করে। একইভাবে জ্বরের চিকিৎসায় ব্যবহৃত নাপা ট্যাবলেটের ১ পাতার আগের দাম পাইকারি পর্যায়ে ছিল ৭ টাকা। ভোক্তাদের কাছে তা বিক্রি হতো ৮ থেকে ১০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা। লোসারটান পটাশিয়াম ৫০ মিলিগ্রামের প্রতি পিসের দাম আট টাকা থেকে ১০ টাকা করা হয়েছে। প্যারাসিটামল ৫শ’ মিলিগ্রামের ১০ পিস ওষুধের দাম আট টাকা থেকে ১২ টাকা হয়েছে। প্যারাসিটামল ৬৬৫ মিলিগ্রাম ১০ পিস ওষুধের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা হয়েছে। অ্যামলোডিপাইন অ্যাটেনোলোল ৫শ’ মিলিগ্রামের দাম ছয় টাকা থেকে আট টাকা হয়েছে। ব্রোমাজিপাম ৩ মিলিগ্রামের দাম পাঁচ টাকা থেকে সাত টাকা হয়েছে। ১০ পিস কিনতে আগে ৫০ টাকা লাগত এখন ৭০ টাকা লাগে। অ্যাসপিরিন ৭৫ মিলিগ্রামের দাম ৬ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ৮ টাকা টাকা হয়েছে। মেট্রোনিডাজোলের দাম ৪শ’ মিলিগ্রামের দাম এক টাকা থেকে হয়েছে দুই টাকা। এই ওষুধের ১০ পিসের দাম ১৪ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ৩০ টাকা হয়েছে।
বেক্সিমকোর টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীর ওষুধ ট্রানেটা ২.৫/১০০০ প্রতি পিস ১৩ থেকে বেড়ে ১৫ টাকা করা হয়েছে। এক বক্স (২০টি) ২৬০ থেকে বেড়ে ৩০০ টাকা হয়েছে। বেড়েছে ১৫ শতাংশ। একই কোম্পানির হৃদরোগের জন্য ব্যবহৃত রসুটিন ২০ মিলি গ্রামের প্রতি পিস বেড়েছে ২ টাকা করে। এক বক্স ৩০টির দাম আগে ছিল ৯০০ টাকা। তা এখন বেড়ে ৯৬০ টাকা হয়েছে। বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ। অ্যাজমার সমস্যায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের মনোকাস্ট ১০ এমজি প্রতি ক্যাপসুল বিক্রি হচ্ছে ১৭ টাকা ৫০ পয়সা করে। যা আগে ছিল ১৫ টাকা। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ম্যাক্সরিন ০.৪ মি.গ্রা. ক্যাপসুল প্রতি পিস ১০ থেকে বেড়ে ১২ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এক পাতার (১০টি) দাম ১০০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকা হয়েছে। বেড়েছে ২০ শতাংশ। ইউনিমেড ইউনিহেলথ ফার্মাসিউটিক্যালসের ইউরোম্যাক্স ০.৪ মি.গ্রা. ক্যাপসুলের দাম প্রতি পিস ১০ থেকে বেড়ে ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক বক্সের (৩০টি) দাম ৩০০ থেকে বেড়ে ৩৬০ টাকা হয়েছে। বেড়েছে ২০ শতাংশ। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যথানাশক এরিয়ান অয়েনমেন্ট ১৫ গ্রাম টিউবের মূল্য টাকা ৭০ থেকে বাড়িয়ে ৮৫ টাকা করা হয়েছে। একই কোম্পানির ফাইলোপেন ডি এস ক্যাপসুল প্রতি পিস ১২ থেকে ১৪ টাকা করা হয়েছে। স্কয়ারের অ্যারোমাইসিন পেডিয়েট্রিক ৬০ এমএলের ড্রপ ৭০ থেকে বেড়ে ৭৫ টাকা হয়েছে।
স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের গ্যাস্ট্রিক ও আলসারের অ্যান্টাসিড প্লাস ২০০ মিলিগ্রামের সাসপেনশন সিরাপের দাম ৭৫ থেকে বাড়িয়ে ৯০ টাকা করা হয়েছে। এরিস্ট্রো ফার্মা লিমিটেডের অ্যাভোল্যাক ওরাল সল্যুসন ১০০ এমএল ১৭৬ থেকে ২০০ টাকা হয়েছে। যা রোগীদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ব্যবহৃত হয়।
এ ছাড়া বর্তমান নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় জ্বর-সর্দিতে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া ফেক্সোফেনাডিন প্রতি পিস ৮ টাকা থেকে ১২ টাকা হয়েছে। অ্যাজিথ্রোমাইসিন প্রতি পিস ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা হয়েছে। ভিটামিন বি১ বি৬ বি১২ এর প্রতি পিসের দাম ৭ টাকা থেকে দুই ধাপে দাম বাড়িয়ে ১০ টাকা হয়েছে। ইসমিপ্রাজল এর প্রতি পিসের দাম ৫ টাকা থেকে ৭ টাকা হয়েছে। লোসারটান পটাশিয়াম ৫০ মিলিগ্রামের প্রতি পিসের দাম ৮ টাকা থেকে ১০ টাকা করা হয়েছে।
প্যারাসিটামল ৫০০ মিলিগ্রামের ১০ পিস ওষুধের দাম ৮ টাকা থেকে ১২ টাকা হয়েছে। প্যারাসিটামল ৬৬৫ মিলিগ্রাম ১০ পিস ওষুধের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা হয়েছে। প্যারাসিটামল সিরাপের দাম হয়েছে ২০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা। অ্যামলোডিপাইন অ্যাটিনোলাল ৫ মিলিগ্রামের দাম ৬ টাকা থেকে ৮ টাকা হয়েছে। ব্রোমাজিপাম ৩ মিলিগ্রামের দাম ৫ টাকা থেকে ৭ টাকা হয়েছে। ১০ পিস কিনতে আগে ৫০ টাকা লাগত এখন থেকে ৭০ টাকা লাগবে। অ্যাসপিরিন ৭৫ মিলিগ্রামের দাম এক পাতায় ১০ পিসের দাম পড়ত ৫ টাকা এখন ৮ টাকা টাকা হয়েছে।
ওষুধের দাম বাড়ার কথা স্বীকার করেছেন ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, বর্তমানে ডলারের দাম বেড়ে গেছে। আর ওষুধের কাঁচামাল বিদেশ থেকে আনতে হয়। সে কারণে দামে কিছুটা সমন্বয় করা হয়েছে। তবে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম এক পয়সাও বাড়ানো হয়নি। ১১৭টি ওষুধের দাম সরকার আগে যা ঠিক করে রেখেছিল, সেগুলো আমরা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছি। তবে যেসব পণ্য আমরা বিদেশ থেকে আনি, সেগুলোর দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে কিছু সমন্বয় করা হয়েছে। তবে স্বাভাবিকভাবে বেশি বাড়তে দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, যেসব ওষুধ না খেলে মানুষ মারা যেতে পারে, সেই ১১৭টি ওষুধের দাম এক পয়সাও বাড়ানো হয়নি। এর বাইরে কিছু নতুন নতুন ওষুধ এসেছে। সেগুলোর দাম বাড়ছে, আমি স্বীকার করি। তবে সেটা ডলারের দামের সঙ্গে সমন্বয় করে। এর বাইরে কোনো ওষুধের দাম বৃদ্ধির সুযোগ আমরা দিইনি।
আমরা সবাই জানি ডলারের দাম বেড়েছে। ৮৬ টাকার ডলার এখন গিয়ে দাঁড়িয়ে ১১৫ থেকে ১১৭ টাকা পর্যন্ত ছাড়িয়েছে। ওষুধের কাঁচামাল কিনতে গেলে আরও বেশি দাম দিতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে কিছু কিছু কোম্পানি তাদের উৎপাদিত ওষুধের দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু তাও খুব বেশি না। ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই রয়েছে। কিন্তু ক্রয়-ক্ষমতা দূরে থাক সংসারের খরচ কাটছাট করে ওষুধের বাড়তি মূল্য দিতে হচ্ছে দাবি করে রাজধানীর মহাখালীর বাসিন্দা শারমিন সুলতানা বলেন, দীর্ঘদিন যাবত আমি ডায়াবেটিসে ভুগছি। সঙ্গে আরও নানা রোগ ভর করেছে। নিয়মিত ওষুধ খেতেই হয়। কিন্তু সম্প্রতি ওষুধের বাড়তি দাম মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজার খরচ কমিয়ে, সকালে একটা ডিম না খেয়ে বা সন্ধ্যার নাস্তায় শুধু চা-বিস্কুট খেয়ে এই বাড়তি দাম মেটাচ্ছি। একইভাবে দুঃখের কথা জানালেন, রাজধানীর শাহবাগে মামুন ফার্মেসিতে কন্যাশিশু শিপ্রার জন্য নাপা সিরাপ কিনতে আসা ভূতের গলির বাসিন্দা কমল পাল। ওষুধের বাড়তি দামে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, চাল, ডাল, তেল, সবজি সব কিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী। যে কোনো কিছুর দাম বাড়লে সেটা খাওয়া কমিয়ে দেই। তেলের দাম বাড়ার পর তেল কেনা কমিয়েছি। কিন্তু ওষুধের প্রয়োজনীয়তা কমাবো কিভাবে? শিশুর যদি জ্বর হয় নাপা সিরাপ খাওয়াতেই হয়।
এদিকে বাসায় বয়স্ক মা উচ্চ রক্তচাপের রোগী। নিয়মিত তাকে ওষুধ খেতে হয়। আগে এক পাতা ওষুধ ৮০ টাকায় কিনতাম। এখন সেটা ১শ’ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আয় একই থাকছে খরচ বেড়েই চলেছে। বাঁচতে গেলে ওষুধ তো কিনতেই হবে। এ খরচ আমি কিভাবে কমাব?
নাপা সিরাপের এই বাড়তি দাম রাখার কারণ হিসেবে রাজধানীর মগবাজারের চেয়ারম্যান গলির মুখে মেখলা ফার্মেসির স্বত্ব¡াধিকারী মিঠু জানান, আগে আমরা কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে এই সিরাপ কিনতাম ১৮ টাকায়। কাস্টমারদের কাছে বিক্রি করতাম ২০ টাকায়। কিন্তু আমাদেরই এখন কেনা পড়ছে ৩১ টাকা করে। যা আমরা ৩৫ থেকে ৪০ টাকা করে বিক্রি করছি। এখানে তো আমাদের করার কিছু নেই। একই দাবি করেন অপর ফার্মেসি ব্যবসায়ী রাজিব চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, ওষুধের দাম বাড়ায় রোগীদের কষ্টের বিষয়টা সবাই দেখছে। কিন্তু আমরা ব্যবসায়ীরাও যে ধুঁকে ধুঁকে মরছি সেটা কেউ দেখছে না। আগে যে মূল্যে ওষুধগুলো কোম্পানি থেকে আমরা কিনতাম কয়েক মাসের ব্যবধানে তা দ্বিগুণ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৩গুণ দামও হয়ে গেছে। আমাদেরও তো দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। সরকার আমাদের বিষয়ে যদি কোনো প্রণোদনা না দেয় তা হলে পথে বসতে হবে। তবুও দাম বাড়ানোর পক্ষেই সাফাই গাইলেন ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব এসএম শফিউজ্জামান। তিনি বলেন, ওষুধের কাঁচামাল আমদানির জন্য আগে এলসি খুলতে লাগত ১ ডলারের বিপরীতে ৮০ টাকা। এখন যখন শিপমেন্ট এসে পৌঁছাচ্ছে তখন ডলারের দাম উঠেছে ১১৫ থেকে ১১৭ টাকায়। প্রতি ডলারে ৩০ টাকা করে বেশি দিতে হচ্ছে।
প্রাইস পলিসি মোতাবেক প্রত্যেক বছরের বাজারের আর্থিক অবস্থা যাচাই করে পণ্যের খুচরা দাম নির্ধারণ করার কথা। কিন্তু ২০ বছরেও তা করা হয় নি। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দামও চড়া। এখন কিছু ওষুধের দাম না বাড়ালে প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকা মুশকিল। আমরাও আসলে অসহায়ই।স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি, দেশের মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য তালিকাভুক্ত ১১৭টি ওষুধের দাম বাড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে সরকারের হাতে রয়েছে। আর এই ক্ষমতাবলে সেগুলোর দাম বাড়ানো হয়। ওই সময় জরুরি ব্যবহৃত ৫৩টি ওষুধের দাম পুনর্নির্ধারণ করা হয়।এর মধ্যে প্যারাসিটামল ৫০০ এমজি ট্যাবলেটের দাম ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ১ টাকা ২০ পয়সা, প্যারাসিটামল ৫০০ এমজি ট্যাবলেটের (র্যাপিড) দাম ৭০ পয়সা থেকে করা হয় ১ টাকা ৩০ পয়সা, প্যারাসিটামল ৬৫০ এমজি ট্যাবলেটের (এক্সআর) দাম ১ টাকা ৩১ পয়সা থেকে করা হয় ২ টাকা, প্যারাসিটামল ১০০০ এমজি ট্যাবলেটের দাম করা হয়েছে ২ টাকা ২৫ পয়সা যা আগে ছিল ১ টাকা ৪ পয়সা, একইভাবে প্যারাসিটামল ৮০ এমজি ড্রাপস ১৫ এমএল বোতলের দাম করা হয় ২০ টাকা যা আগে বিক্রি হতো ১২ টাকা ৮৮ পয়সায়, প্যারাসিটামল ৮০ এমজি ড্রাপস ৩০ এমএল বোতলের দাম হয় ৩০ টাকা, এর আগের দাম ছিল ১৮ টাকা, প্যারাসিটামল ১২০ এমজি/৫ এমএল সাসপেনশন (৬০ এমএল) বোতলের দাম হয়েছে ৩৫ টাকা, আগের দাম ১৮ টাকা, প্যারাসিটামল ১২০ এমজি/৫ এমএল সাসপেনশন ১০০ এমএল বোতলের দাম হয়েছে ৫০ টাকা, আগের দাম ৩০ টাকা ৮ পয়সা, প্যারাসিটামল ১২০ এমজি/৫ এমএল সিরাপ (৬০ এমএল) বোতল দাম ৩৫ টাকা, আগের মূল্য ১৮ টাকা, প্যারাসিটামল ১২০ এমজি/৫ এমএল সিরাপ (১০০ এমএল) বোতলের দাম করা হয়েছে ৫০ টাকা, আগের মূল্য ২৭ টাকা ৭২ পয়সা, মেট্রোনিডাজল ২০০ এমজি ট্যাবলেট কোটেড আগের মূল্য ৬০ পয়সা, বর্তমান মূল্য ১ টাকা, মেট্রোনিডাজল ২৫০ এমজি ট্যাবলেট কোটেড আগের মূল্য ৯২ পয়সা, বর্তমান মূল্য ১ টাকা ২৫ পয়সা, মেট্রোনিডাজল ৪০০ এমজি ট্যাবলেট কোটেড আগের মূল্য ১ টাকা ৩৭ পয়সা, বর্তমান মূল্য ১ টাকা ৭০ পয়সা, মেট্রোনিডাজল ৫০০ এমজি ট্যাবলেট কোটেড আগের মূল্য ১ টাকা ৬৬ পয়সা, বর্তমান মূল্য ২ টাকা, মেট্রোনিডাজল ২০০এমজি/৫এমএল সাসপেনশন ৬০ এমএল বোতলের আগের মূল্য ২৬ টাকা, বর্তমান মূল্য ৩৫ টাকা, মেট্রোনিডাজল ২০০এমজি/৫এমএল সাসপেনশন ১০০ এমএল বোতলের আগের মূল্য ৩৪ টাকা ৯২ পয়সা, বর্তমান মূূল্য ৪৫ টাকা।
এর আগে সর্বশেষ ২০১৫ সালে কয়েকটি ব্র্যান্ডের ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু দাম বাড়লেও কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই করা হয়নি উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক আ ব ম ফারুক জনকণ্ঠকে বলেন, কিছু কিছু ওষুধের দাম যৌক্তিকভাবে বাড়ানো হয়নি। সরকার নির্ধারিত অনেক ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবিত দামের চেয়ে মূল্য অনেকটা বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। এর সুবিধা নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা।মাঠপর্যায়ের ফার্মেসিগুলোও অধিক মুনাফার লোভে ৫৩টি ওষুধের বদলে অন্যান্য ওষুধেরও দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে করে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকেই। এ জন্য প্রয়োজন কঠোর একটি মনিটরিং টিম। যারা বাজার মনিটর করবে এবং কেউ ওষুদের বাড়তি দাম আদায় করলে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেবে।
জীবনরক্ষাকারী ওষুধের বাড়তি দাম আদায় করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেনও। তিনি বলেন, আমরা চাই না একটি রোগীও বিনা চিকিৎসায় মারা যাক। টাকার ওষুধ কিনতে না পেরে আরও অসুস্থ হোক। ডলারের ঊর্ধ্বমুখী মূল্যের কারণে কিছু ওষুধের দাম বেড়েছে যে তা অস্বীকার কার উপায় নেই। কিন্তু ব্যবসায়ীদের খেয়াল রাখতে হবে তা যেন সাধারণ মানুষের জন্য চাপ তৈরি না করে কোনোভাবেই।
(স্বপ্না চক্রবর্তী)